বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা মালিকরা

পোশাক খাত

জিন্নাতুন নূর

তৈরি পোশাক শিল্পে চলমান নানা সংকটের কারণে একের পর এক ছোট ও মাঝারি গার্মেন্টগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতি পোষাতে না পেরে উদ্যোক্তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ বড় কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে নিজ কারখানা বেচে দিচ্ছেন। আর কেউ পোশাক সংগঠনগুলোকে না জানিয়েই কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর দেওয়া তথ্যে, গত দুই বছরে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত অন্তত ৫০০ এবং এর বাইরে ছোট-মাঝারি আরও এক হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর বাইরে রুগ্ন অনেক কারাখানা এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

কারখানা মালিকরা জানান, বিদেশি ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শন, রানা প্লাজা ধস, রাজনৈতিক সহিংসতা, বিদেশি নাগরিক হত্যা, বিদ্যুত্-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারসহ নানা কারণে দেশের ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এ অবস্থায় চলমান বাজারে অনেকের পক্ষে ব্যবসা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই ভাড়া বাড়ি বা শেয়ারর্ড বিল্ডিংয়ে কারখানা বসিয়ে দীর্ঘদিন অর্ডার নিয়ে আসছিলেন। তারা সরাসরি ক্রেতার কাছ থেকে বা বড় কারখানাগুলো থেকে অর্ডার পেয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু শ্রমিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে এখন বিদেশি ক্রেতারাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে থাকা কারখানাগুলো থেকে পোশাক কিনবেন না। অন্যদিকে বিদ্যুত্-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উদ্যোক্তাদের উত্পাদন খরচ বেড়ে গেছে। আর শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মালিক শ্রমিকের বেতন দিতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে ক্রমাগত ক্ষতির মুখে পড়ে ছোট-মাঝারি কারখানার মালিকদের কেউ কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন আবার কেউ কেউ বড় কারখানা মালিকদের কাছে কারখানা বিক্রি করছেন। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তথ্য মতে, সারা দেশে নিবন্ধিত পোশাক কারখানার সংখ্যা ৫ হাজার ৯৯৯টি। বর্তমানে সচল কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৩০৬টি। অর্থাত্ এক হাজার ৬৯৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর বাইরে রুগ্ন কারখানার সংখ্যা সাড়ে চারশ’র কাছাকাছি। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশ শেয়ার্ড বিল্ডিং কারখানা। পোশাক মালিকরা আরও জানান, শেয়ার্ড বিল্ডিং বা ভাড়া করা ভবনে থাকা ছোট-মাঝারি কারখানাগুলোই বেশি চাপে আছে। এ ছাড়া বিজিএমইএর সদস্য নয় এমন অনেক কারখানাও ক্ষতি সামলাতে না পেরে হঠাত্ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক নেতারা জানান, ছোট-মাঝারি কারখানাগুলোর অবস্থা ভালো না। ছোটগুলো অহরহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর বড়গুলো চাপে আছে। অবস্থা এতই খারাপ যে, ক্রেতারা ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো থেকে অর্ডার ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমনকি দাম কমানোর জন্য বিক্রেতাদের চাপ দিচ্ছেন। বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একথা ঠিক যে ক্ষতি পোষাতে না পেরে আমাদের ৫০-৬০টি কারখানা গত এক বছরে বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে ৩৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে শেয়ার্ড বিল্ডিংয়ে থাকা কারখানাগুলো এ তালিকায় আছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে জানানো হয়েছে ২০১৮ সালের মধ্যে যদি ভাড়া ভবন থেকে তারা কারখানা সরিয়ে না নেয় তবে এসব কারখানাকে আর অর্ডার দেওয়া হবে না। বিজিএমইএর সভাপতি আরও জানান, আমাদের সদস্য নয় এমন আরও সাত-আটশ’ কারখানা আমাদের না জানিয়ে হঠাত্ কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্ষতিতে থাকা ছোট-মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোকে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে ইউএসএইড, জাইকাসহ বিদেশি সংস্থাগুলো আইএলও আইন অনুযায়ী স্বল্প সুদে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বিদেশি ফান্ড ব্যবহার করে কীভাবে এই কারখানাগুলোকে সাহায্য করতে পারি তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। গত দুবছরে বড় কারখানাগুলোর মাধ্যমে ছোট কারখানা কিনে নেওয়ার ঘটনাও বেড়েছে। কিছুদিন আগে অব্যবস্থাপনায় প্রায় ২০ কোটি টাকার ব্যাংক দায় হওয়ায় ‘সেন্সিবল’ নামের একটি ছোট গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান কিনে নেয় আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাসরোটেক্স গ্রুপ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্রেতাদের পক্ষ থেকে মূল্য কমানোর চাপ, অব্যবস্থাপনা, স্বল্প ক্রেতাসহ বিভিন্ন কারণে ছোট-মাঝারি গার্মেন্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর তথ্যে, বিভিন্ন কারণে তাদের সদস্যভুক্ত ৯০০ গার্মেন্টের মধ্যে ৬০টির বেশি ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান বড় কারখানা মালিকরা কিনে নিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর