বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের যৌথ আহ্বান ৯ রাষ্ট্রদূতের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ঢাকায় কর্মরত নয়টি দেশের নারী রাষ্ট্রদূতরা যৌথভাবে একটি নিবন্ধ লিখে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের কর্মতত্পরতা’  শীর্ষক চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল একযোগে এই নিবন্ধ প্রকাশ করেছে দূতাবাসগুলো। যৌথ নিবন্ধে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ওয়ানজা ক্যাম্পোস দ্য নরেগ্রো, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হ্যান ফুগল এস্কেয়ার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি অবেয়ার, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত নরলিন বিনতে ওসমান, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারিটা কুয়েলেনায়ের, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মেরেটে লুন্ডিমো, শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ইয়াসোজা গুনাসেকরা ও ভুটানের রাষ্ট্রদূত পেমা শোডেন। প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসে ১৬ দিনের কর্মতত্পরতা শুরু হয় এবং ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে শেষ হয়।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘নয় জাতির নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমরা অবশ্যই অনেক বিষয় নিয়েই কাজ করছি। তবুও আমরা এ ব্যাপারে একমত যে সারা বিশ্বে, আমাদের  দেশে এবং বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সাড়া দেওয়া ও এর প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা জরুরি ভিত্তিতে আমলে নেওয়া উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীর প্রতি সহিংসতা সারা বিশ্বে ভয়ানক আকারে বিস্তৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনের একজন নারী তার জীবন সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন নিপীড়নের শিকার হন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০১১ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শতকরা ৮৭ ভাগ বিবাহিত নারী তাদের স্বামীর হাতে নিগৃহীত হন। আমরা সবাই এসব সহিংসতা প্রতিরোধে কিছু করতে পারি। কারণ নারীর প্রতি সহিংসতা সব সম্প্রদায়ের ওপর হুমকিস্বরূপ, এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করে এবং সহিংসতা ও দ্বন্দ্বকে উসকে দেয়। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, নারীর ওপর সহিংসতার উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়, নারীদের আয়ের উত্স হারানো, উত্পাদনশীলতা হ্রাস এবং বংশ পরম্পরায়  নেতিবাচক প্রভাব। ‘ইউএন উইমেন’ অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৪ বছর পর্যন্ত নারী ও মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে সমষ্টিগতভাবে ক্যানসার, সড়ক দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়া এবং যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর চেয়েও নারীর প্রতি সহিংসতা অধিকতর মৃত্যু ও শারীরিক অক্ষমতার কারণ। জীবন-সঙ্গীর কাছ থেকে সহিংসতার শিকার হওয়া থেকে শুরু করে যৌন হয়রানি এবং জোরপূর্বক বিয়েসহ নারীর প্রতি সহিংসতার বহু ধরন রয়েছে। সহিংসতা যে রকমই হোক তা আমাদের সামগ্রিক মানবতার জন্য কলঙ্ক, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাধা এবং তা আমাদের এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানায়। সহিংসতা অত্যাবশ্যকীয় নয় এবং আমরা প্রত্যেকেই এটি বন্ধের জন্য কাজ করতে পারি। নিবন্ধে আরও বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের জীবনে পদক্ষেপ নিতে পারি। ভুক্তভোগীদের কথা শুনে এবং তাদের বিশ্বাস করে আমরা তাদের সহায়তা করতে পারি। পুরুষ ও ছেলেদের  শেখাতে পারি যেন তারা নারী ও মেয়েদের সহযোগিতা করে এবং তাদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ‘নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের কর্মতত্পরতা’ সবার জন্য এ ব্যাপারে কাজ করার একটি সুযোগ। জাতিসংঘের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রচারাভিযানে নারী ও পুরুষ, ছেলে ও মেয়ে, সরকারি কর্মকর্তা এবং কমিউনিটি নেতাসহ সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আমরা এ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি কারণ, শুধু সমষ্টিগত পদক্ষেপের মাধ্যমেই নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর