শিরোনাম
বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জলবায়ু সহায়তা তহবিল নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই

নিজামুল হক বিপুল, প্যারিস থেকে

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের নবম দিন পার হলেও উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ এলডিসি, সিডস এবং আফ্রিকান স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু সহায়তা তহবিলের অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি। একইভাবে ২১ শতকের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার দাবির ব্যাপারেও আশার বাণী নেই। বরং উন্নত বিশ্ব ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার আশ্বাস দিলেও, সেক্ষেত্রেও কার্বন নিঃসরণ যেভাবে কমানো দরকার সেটা হবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গত সোমবার সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, কার্বন নিঃসরণের দিক থেকে বাংলাদেশ পেছনের সারিতে থাকলেও এই কার্বনের কারণেই জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জলবায়ুু পরিবর্তন বর্তমানে মানবতা এবং পৃথিবীর জন্য সবচাইতে বড় হুমকি। বিশেষত স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো দুর্বল রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে কম ভূমিকা রাখছে। অথচ সেই তুলনায় তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্যারিস সম্মেলনে সোমবার থেকে শুরু হওয়া মন্ত্রী পর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠকে এখন সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে জলবায়ু সহায়তা তহবিল, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনা, উন্নত বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং লসঅ্যান্ড্যা ড্যামেজের বিষয়সহ আরও অনেকগুলো ইস্যু। বাংলাদেশসহ লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি (এলডিসি), স্মল আইল্যান্ড কান্ট্রি (সিডস) এবং আফ্রিকান স্বল্প উন্নত ও দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু অর্থ সহায়তা নিয়ে গত দুই দিন ধরে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এলডিসি, সিডস এবং আফ্রিকান দেশগুলো জোরালোভাবে অর্থ সহায়তার কথা বললেও মন্ত্রী পর্যায়ের এসব বৈঠকে এখন পর্যন্ত শিল্পোন্নত দেশগুলো জলবায়ু তহবিলের অর্থ সহায়তার বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলছে না। সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সমন্বয়কারী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. কাজী খলীকুজ্জমান অর্থ সহায়তার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন পর্যন্ত শিল্পোন্নত দেশগুলো পরিষ্কার কিছু বলছে না। জলবায়ু তহবিলে তারা কত টাকা দেবে, কবে দেবে, কীভাবে দেবে সে বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি হতাশার সুরে বলেন, এ ব্যাপারে কংক্রিট কিছু পাওয়া যাবে বলেও মনে হয় না। কার্বণ নিঃসরণের বিষয়ে কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, গত দুই দিন ধরে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অনেক দেনদরবার হচ্ছে। এলডিসি, সিডস ও আফ্রিকান দেশগুলোর পক্ষ থেকে একই দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। কিন্তু এ নিয়েও আশার আলো নেই। মনে হচ্ছে, এটি দুই ডিগ্রির মধ্যেই রাখা হতে পারে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ’ পুরস্কার লাভ করেছেন। মন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক অর্জনের ২ থেকে ৩ ভাগ খরচ হয়ে যায় পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে। ভবিষ্যতে এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে নজর দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জনশক্তির দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। গত কয়েক বছরে আমরা দেশজুড়ে ৪০ লাখ বাড়িতে সৌরবিদ্যুত্ সংযোজন করেছি এবং প্রায় দেড়কোটি মানুষ এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর