শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জাহাজ ক্রয়ে পিপিআর অব্যাহতি চায় শিপিং করপোরেশন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

জাহাজ কিনতে এবার সরকারি ক্রয়নীতি (পিপিআর) অনুসরণের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়েছে শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। তবে পরিকল্পনা কমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বিএসসি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুযায়ী এ সংস্থার ক্ষেত্রে পিপিএ ও পিপিআর প্রয়োগ বাধ্যতামূলক।

জানা গেছে, ২৯ অক্টোবর পিপিআর অব্যাহতি চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় বিএসসি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ১৫ নভেম্বর বিএসসিকে জানিয়ে দেয়, সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রেগুলেশন-২০০৮ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কোনো এখতিয়ার সিপিটিইউর (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) নেই।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রচলিত আইনে পিপিআর থেকে অব্যাহতির যে দুটি সুযোগ রয়েছে তার কোনোটিতে জাহাজ ক্রয়ের বিষয়টি পড়ে না। এর একটি হচ্ছে সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে কারিগরি ও অর্থনৈতিক কারণ যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হলে উম্মক্ত দরপত্র ব্যতীত সীমিত দরপত্র পদ্ধতি অথবা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে এ ধরনের কেনাকাটা করা যায়। এ ছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার অনুমোদনক্রমে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বা বিপর্যয়কর কোনো ঘটনা মোকাবিলার জন্য, জনস্বার্থে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা অন্য কোনো ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে। তবে শিপিং করপোরেশনের জাহাজ কেনার উদ্যোগে উলি­খিত নীতি অনুসরণ করে নেওয়া হলে নানা প্রশ্ন তৈরি হবে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে বিএসসির এক কর্মকর্তা জানান, তাদের হাতে এখন সমুদ্রপথে পরিচালনা করার মতো উল্লেখযোগ্য জাহাজ নেই। ফলে দ্রুত জাহাজ কেনা দরকার। পিপিআর অনুসরণ করে কেনাকাটা করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়। এ কারণে তারা সরকারি ক্রয়নীতি অব্যাহতি চেয়েছেন। এ ছাড়া সরকারের বিমান কেনার ক্ষেত্রে পিপিআর অব্যাহতির এ ধরনের নজির রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। বিগত মহাজোট সরকারের আমলে ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নে আলোচ্য সময়ের মধ্যে ২১টি নতুন জাহাজ শিপিং করপোরেশনের বহরে যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী ২০১১ সালে চীন সরকারের অর্থায়নে নতুন ৬টি জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে ২০১৪ সালে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমোট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়। সিদ্ধান্ত হয় নতুন এসব জাহাজ কেনার জন্য ঋণ দেবে চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক। গত মার্চে সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (পারচেজ) জাহাজ কেনার এ প্রকল্পে অনুমোদনও দেয়। তবে চীন থেকে এ জাহাজ কেনা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, নতুন জাহাজ কেনার জন্য চীনের যে প্রতিষ্ঠানের (জওসান চেংহং ইন্টারন্যাশনাল শিপইয়ার্ড গ্রুপ লিমিটেড) সঙ্গে চুক্তি করেছে বিএসসি সে প্রতিষ্ঠানের নতুন জাহাজ নির্মাণে কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। ফলে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়ায় চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে চিঠি দিয়ে চায়নিজ ওই ব্যাংকটি তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিএসসির এমডি কমোডর হাবিবুর রহমান ভূইয়া। সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে তিনি জানান, যে শিপইয়ার্ড কোম্পানিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন ৬টি জাহাজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক চাইছে তার চেয়ে অভিজ্ঞ একটি শিপইয়ার্ড কোম্পানির কাছ থেকে জাহাজ নির্মাণ করা হোক। এক্ষেত্রে তারা ইয়াজিজিয়াং শিপবিল্ডিং গ্রুপ লিমিটেডের শিপ ইয়ার্ড থেকে বিএসসিকে জাহাজ কেনার পরামর্শ দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর