বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাত বাড়লে দালালের দৌরাত্ন্য রাজশাহী মেডিকেলে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাত বাড়লে দালালের দৌরাত্ন্য রাজশাহী মেডিকেলে

বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটায় রাত দেড়টা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়াল। কাছে গিয়ে জানা গেল, ভিতরে রোগী আছে। এসেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে। রোগীকে ভিতর থেকে নামাতেই ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক যুবক অ্যাম্বুলেন্সের দিকে ছুটে গেলেন। রোগী নামানো থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে পৌঁছে দিয়ে ওষুধপত্র কিনে দেওয়ার সব দায়িত্ব নিলেন ওই যুবক। রাতেই উম্মে সালমা নামের ওই রোগীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। ওয়ার্ডে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিতেই রোগীর স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই যুবকটি লক্ষীপুরে ওষুধের দোকানে যান। এরপর এক হাজার ১৫০ টাকার ওষুধ নিয়ে ফিরে আসেন। বাজারে সাধারণভাবে কিনতে গেলে ওষুধের দাম হতো সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা।

পাবনা থেকে আসা রুবিনা নামের এক রোগীর স্বজন বহির্বিভাগের সামনে কান্নাকাটি করছিলেন। জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন, এক দালাল তাকে ভালো রিপোর্টের কথা বলে মেডিসিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে ২ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে রিপোর্ট দেখানোর পর তিনি জানতে পারেন তা সঠিক নয়। এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন রুবিনা। হাসপাতাল পুলিশ বক্সের এক সদস্য এসে দালালের কাছ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করে দেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র এমনই। কর্মচারী পরিচয়ে অর্ধশত দালাল প্রতিদিনই হয়রানি করছেন রোগীদের। আশপাশের জেলাগুলো থেকে রোগী আসায় অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। দিনের বেলা কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও রাতে বাড়ে দালালের দৌরাত্ন্য। ওয়ার্ড ভাগ করে অবস্থান করে দালালরা। দালালদের নাগাল থেকে বাদ যায়নি ব্লাড ব্যাংকও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতাল পুলিশ বক্সের এক সদস্য জানান, রাতে রোগীর স্বজনরা অনেকটা অসহায় থাকে। সেই সুযোগ কাজে লাগায় দালালরা। কম খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

কিছু দিন আগে রাজশাহীর বাগমারার এক গরিব রোগীকে রাতে এক দালাল বাগিয়ে নিয়ে যায় লক্ষীপুরের আরোগ্য নিকেতনে। ওই রোগীর প্রেসক্রিপশনে ৬টি ওষুধের নাম লেখা ছিল। কিন্তু দোকানদার কৌশলে ৭ নম্বরে একটি অতিরিক্ত ওষুধ লিখে দিয়ে বাড়তি ২ হাজার ৩০০ টাকা আদায় করেন। রামেক হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোর এবং ইমারজেন্সি বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক দালাল রোগী ধরার জন্য ওতপেতে থাকে। এদের মধ্যে বেশ কিছু চিহ্নিত দালাল আছে। এদের মধ্যে আনার, মিজান, রবিউল, বুলবুল, ল্যাংড়া মসিউর, রোকিয়া, আসমা, তোহসিনা, মুসলিমা, কবির, নজরুল, আলিম, লালন, ওসমান, কালু, ডালিম, মাসুদ, সেন্টু, আপেল দালাল হিসেবে পরিচিত মুখ। আর এসব দালালদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ওষুধের দোকান মালিকরা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা দালালদের দৌরাত্ন্যরে কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ন্যরে কারণে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দালাল প্রতিরোধে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি। দালালরা এখন সিসি ক্যামেরার বাইরে গিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি জানান, দালাল মুক্ত রামেক হাসপাতাল গড়তে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই পুলিশের সহযোগিতায় দালালদের তৎপরতা বন্ধ করা হবে।

সর্বশেষ খবর