শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঝুলে গেছে বিএনপির পুনর্গঠন

শফিউল আলম দোলন

সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও ফের ঝুলে গেছে বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের কারণে আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে মহাসচিবের পদটিকে ভারমুক্ত করার বিষয়টিও আটকে গেছে। তারপরও চেয়ারপারসনের ক্ষমতাবলে এ মাসেই সেটি সম্পন্ন করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে কার্যনির্বাহী কমিটি পুনর্গঠনসহ স্থায়ী কমিটির মর্যাদায় নতুন করে দলের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কাজও পিছিয়ে গেছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর চলতি মাসে দলের জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার যে কথা ছিল তাও আপাতত হচ্ছে না। তবে প্রশাসন ও পুলিশি বাধার কারণেই জাতীয় কাউন্সিলসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন দলের সিনিয়র নেতারা।

এ মাসে জাতীয় কাউন্সিল না হওয়া সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পরিষ্কার ভাষায় বলেন, পুলিশি বাধাই হচ্ছে এর অন্যতম কারণ। কাউন্সিল করার মতো প্রস্তুতিও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) বললেন অন্য কথা। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় পুনর্গঠন কার্যক্রম বন্ধ আছে বলে মনে করি না। কারণ এই যে, আমরা পৌর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি, এটিও সেই পুনর্গঠনেরই একটি অংশ। তাছাড়া স্থানীয় নির্বাচনের জন্য এ সময়টায় আড়ম্বরপূর্ণ জাতীয় কাউন্সিল করা না গেলেও একটি বর্ধিত সভার মতো ডেকে মহাসচিবকে ভারমুক্ত করাসহ চেয়ারপারসন তার গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে অনেক কিছুই করতে পারেন। অন্যদিকে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল না হওয়া সম্পর্কে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ (অব.)।  তার আগে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার মতো প্রস্তুতিও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না সারা দেশে পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্যের জন্য। ওয়ার্ড কিংবা থানা পর্যায়ে ২০-৫০ জন নেতা-কর্মী একসঙ্গে হলেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তিনি বলেন, জাতীয় কাউন্সিল দূরের কথা, একটা ইউনিয়ন পরিষদের কাউন্সিলও করা সম্ভব হচ্ছে না এই একই কারণে। গ্রামাঞ্চলেও এখন বিএনপির দুই-চারশ লোক একসঙ্গে হতে পারছে না পুলিশের বাধার কারণে। মিটিংয়ের কথা শোনামাত্রই পুলিশ গিয়ে ধরে নিয়ে আসছে। আর কোনো বাড়িতে নামাজ শিক্ষা বই কিংবা ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরিফ থাকলে সেটিও নিয়ে এসে জঙ্গি সদস্যের তক্্মা লাগিয়ে মামলা দিয়ে দিচ্ছে আমাদের দলের মুসলিম নেতা-কর্মীদের নামে। যারা জমি-বাড়ি বিক্রি করে পুলিশের আর্থিক চাহিদা মেটাতে পারছে, তাদের নামে হয়তো কিছুটা সহজ মামলা দিচ্ছে। অন্যথায় জামিন অযোগ্য মামলায় কারাগারে পাঠাচ্ছে, রিমান্ডে নিচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে অস্বীকার পর্যন্ত করছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার কারণে দেশের পৌর এলাকাগুলোতে সাংগঠনিক পুনর্গঠন কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ আছে, তবে পৌর এলাকার বাইরে অনেক জায়গাতেই সেটি চলমান আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির চলমান এই দুঃসময়েও দলের কতিপয় নেতা চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভুল পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। স্রেফ ব্যক্তি স্বার্থের কারণেই চেয়ারপারসনের আশপাশে থাকা এসব নেতা বিএনপিকে সেই পুরনো পথেই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জানা গেছে, চিকিত্সার্থে দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পরপরই দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল তার। এ জন্য তিনি পৌর নির্বাচনে তার দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা থেকে শুরু করে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষরের দায়িত্বও নিজের হাতে না রেখে দলের একজন যুগ্ম-মহাসচিবের ওপর প্রদান করেছিলেন। কিন্তু তারপরও কৌশলে চেয়ারপারসনকে পৌর নির্বাচনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলা হয় যে, তিনি আর অন্য কোনো দিকে মনোযোগই দিতে পারছেন না এখন। তাছাড়া পৌর নির্বাচনের পরে ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনগুলোরও সময় হয়ে যাবে। ফলে দল ও অঙ্গ সংগঠনের পুনর্গঠন কাজ আপাতত স্থগিতই থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া স্থানীয় নির্বাচন তো রয়েছেই, বাদ পড়ার ভয়ে দলের ভিতরের কিছু কেন্দ্রীয় নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনে পরোক্ষভাবে বাধার সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিগত ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ (অব.) এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী আজ ঘরবাড়ি ছাড়া। প্রশাসন ও পুলিশের গ্রেফতার-হয়রানি ও হামলা-মামলার কারণে এই শীতের রাতে কষ্ট করছেন তারা। একটি ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীকে পর্যন্ত একত্র হতে দিচ্ছে না প্রশাসন ও পুলিশের লোকেরা। কাজেই এ অবস্থায় চাইলেও জাতীয় কাউন্সিল করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পুনর্গঠন কার্যক্রম বন্ধ নয়, আপাতত স্থবির হয়ে আছে বলা যায়। আমরা পৌর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি একটি মাত্র কারণে। সেটি হচ্ছে, দেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীকে আমরা দেখাতে চাই যে— আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ইতিমধ্যেই নানা অজুহাতে আমাদের শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কাজেই নির্বাচন নিরপেক্ষ ও নির্বিঘ্ন হবে কিনা সে নিয়ে এখনই সংশয় দেখা দিয়েছে। 

সর্বশেষ খবর