শিরোনাম
শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব ও অহংকার

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব ও অহংকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ শেষে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশে নেন —আইএসপিআর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও জাতীয় উন্নয়নে সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি বিশ্ব শান্তিরক্ষায়ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি প্রতিশ্রুতিশীল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির জন্য এক গর্ব ও অহংকারের প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) ৭৩তম বিএমএ  লং কোর্স ও ৪৩তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের ক্যাডেটদের কমিশন প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে সেনাবাহিনী আজ দেশে-বিদেশে সুনাম ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। বর্তমান সরকার সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে সশস্ত্র বাহিনী একটি চৌকস, গতিশীল ও মর্যাদাপূর্ণ বাহিনী হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হচ্ছে। নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি আপনাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্ব্বপূর্ণ দিন। আজ আপনারা বৃহত্ কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আপনাদের ওপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও  সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আপনাদের সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত থাকতে হবে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে আপনাদের জীবনের একমাত্র ব্রত। আপনাদের জন্য আমার দোয়া ও শুভকামনা অব্যাহত থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, গত সাত বছরে আমাদের সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি গতিশীল, চৌকস এবং যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে আমরা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বের বুকে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরা। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিশীল দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের দেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। আমাদের সেনাবাহিনী দেশে ও বিদেশে অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বীয় দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সকালে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মাদ শফিউল হক, বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এম শফিকুর রহমান তাকে স্বাগত জানান। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সুসজ্জিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও দৃষ্টিনন্দন মার্চপাস্টের অভিনন্দন গ্রহণ করেন। একাডেমিতে কৃতিত্বের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ ক্যাডেটদের পদক প্রদান করেন। চলতি বছর শ্রীলঙ্কার ১ জন ও নেপালের ১ জনসহ মোট ১৯৪ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। এর মধ্যে ৮ জন মহিলাসহ ১৮৯ জন ক্যাডেট ৭৩তম বিএমএ লং কোর্স এবং ৫ জন হচ্ছেন বিএমএ স্পেশাল কোর্সের।  ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. আহসান উল্লাহ সর্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সোর্ড অব অনার এবং কোম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. রুহানী রাব্বি হামজা সামরিক বিষয়ে পারদর্শিতার জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন। ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের র্যাঙ্ক ব্যাজ পরিয়ে দেন।  সেনাবাহিনীর বিশিষ্ট সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সামরিক ও প্রতিরক্ষা অ্যাটাসেবৃন্দ, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ক্যাডেটদের অভিভাবকরা আকর্ষণীয় ও বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আপসহীন ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করেছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে একটি আধুনিক, চৌকস সেনাবাহিনী গড়ে উঠবে। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা কুমিল্লা সেনানিবাসে বিএমএ উদ্বোধন করেন। জাতির পিতা নৌ ও বিমান বাহিনীর উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেন। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও কর্মদক্ষতার পরিচিতি দেশের বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে আমাদের দেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের ত্যাগ ও সাহসিকতার কারণে পার্বত্য অঞ্চলে আজ শান্তি বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে সেনাবাহিনীকে অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের একাডেমিতে পরিণত করেছে। এখানে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই কমপ্লেক্স বিএমএর প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতিসঞ্চার করেছে।

সর্বশেষ খবর