শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পৌরসভায় ভোটের হাওয়া

কঠোর হুঁশিয়ারির পরও মাঠে অর্ধশতাধিক বিদ্রোহী

আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

কঠোর হুঁশিয়ারির পরও মাঠে অর্ধশতাধিক বিদ্রোহী

দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ করি। জাতীয় পার্টি থেকে এসে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হওয়া মকবুল হোসেন প্রভাব খাটিয়ে নিজের ছেলেকে তিন মাস আগে পৌর আওয়ামী লীগের নেতা বানিয়েছেন। এখন পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়ন আদায় করে নিয়েছেন। উপজেলার সব পদ নিজের কব্জা করতে চাইছেন। তাহলে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে জেল-জুলুম খেটে লাভ কী হলো। আমরা রাজপথে আন্দোলন করব, জেল খাটব, নির্যাতন ভোগ করব আর এমপির ছেলে মেয়র হবেন! ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলেন পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলের ভাঙ্গুড়া উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আজাদ খান। তিনি বলেন, আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলা হচ্ছে। এ জন্য আমি চিন্তিত নয়। কারণ দলে আমার মতো ত্যাগীদের মূল্যায়ন হয় না। ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র পেয়েছেন স্থানীয় এমপি মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনাইন রাসেল। এ পৌরসভায় এমপির আপন ভাগিনাসহ আরও দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে সক্রিয়। ভাঙ্গুড়ার আজাদ খানের সুরে একই কথা বললেন কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুম মোরশেদ শান্ত। তিনি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। শান্ত বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কলস প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদরউদ্দিন খান। তখন তো তাকে বহিষ্কার করা হয়নি বরং তাকে পদোন্নতি দিয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে। আর সে সময় আমি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করি। অথচ পৌরসভায় মেয়র পদে আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে যিনি সদরউদ্দিন খানের পক্ষে কলস মার্কায় ভোট চেয়েছিলেন তাকেই কিনা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শান্ত বলেন, দল যদি আমাকে বহিষ্কার করে তারপরও আমি নির্বাচনে লড়ব। উল্লেখ্য, এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তরিকুল ইসলাম তারিক। শুধু ভাঙ্গুড়া ও খোকসাতেই নয়, এমন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন অর্ধশতাধিক পৌরসভায়। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন সমর্থকরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনেকেই আড়ালে সমর্থন সহযোগিতা করছেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় দলের মনোনীত প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা ফ্যাক্টর বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথম দিকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে বিদ্রোহীদের বশে আনার চেষ্টা করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত এক প্রকার বাধ্য হয়েই কেন্দ্র থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তাদের নিজ নিজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। গত রাতে সেই আলটিমেটামের সময় শেষ হয়ে গেছে। জানা গেছে, বুধবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা এ নির্দেশনা অমান্য করবেন তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। ওই রাতেই দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠিকানায়। এদিকে গতকাল বিদ্রোহী প্রার্থীদের বড় অংশ জানান, তারা নির্বাচনে লড়বেন। কেননা মনোনয়ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাদের চাওয়া-পাওয়াকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারলে তারাই জয়ী হবেন বলেও জানান কেউ কেউ। আবার কিছু কিছু জায়গায় এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের মদদেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা মাঠে অনড় রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাবনার চাটমোহর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন সাখো। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মির্জা দুলাল হোসেন। বিগত পৌর নির্বাচনেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। মির্জা দুলাল বলেন, নেতা-কর্মীরা ভেবেছিলেন দলীয় মনোনয়ন আমিই পাব। কিন্তু যাচাই-বাছাই না করেই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনড় ছিলেন যশোর সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দুবার নির্বাচিত মেয়র এম এম কামরুজ্জামান চুন্নু। বাঘারপাড় পৌরসভার বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র খালিলুর রহমান, চৌগাছা পৌরসভায় এস এম সাইদুর রহমান, নওয়াপাড়ায় ফারুক হোসেন ও সাবেক মেয়র ওলিয়ার রহমান, মনিরাপুরে জি এম মজিদ। পাবনার ফরিদুপরে আসাদুজ্জামান আলাল, সুজানগরে বর্তমান মেয়র তোফাজ্জল হোসেন তোফা, চুয়াডাঙ্গায় পৌরসভায় ওবায়দুর রহমান দিপু, কুড়িগ্রাম সদরে সাইদুর রহমান দুলাল ও কাজীউল ইসলাম। নড়াইলের কালিয়া পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র বি এম ইমদাদুল হক টুলু, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী সোহেলী পারভীন, আওয়ামী লীগ নেতা ফকির মুশফিকুর রহমান লিটন ও শেখ লায়েক হোসেন। নড়াইল সদরে সোহরাব হোসেন, সরদার আলমগীর হোসেন ও হাসান। সিলেট বিভাগে চারটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এ নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক করেও তাদের বশে আনতে পারছেন না। শেরপুর নালিতাবাড়ীতে বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. হালিম উকিল। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের রামগতি, বরগুনার বেতাগী, খুলনার পাইকগাছা, মাগুরা সদর, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভাসহ অন্তত ৬০টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে নির্বাচন করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনেকেই শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর