বুঝিয়ে-শুনিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে না পারলে ১৩ ডিসেম্বরের পর বহিষ্কারের পথ বেছে নেবে বিএনপি। দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থেই দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে এর আগে বিদ্রোহী নেতাদের বোঝানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিশেষ বার্তায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। দল পুনর্গঠনের সময় বিদ্রোহী প্রার্থীদের যোগ্যতা অনুযায়ী পদ দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে সব মিলিয়ে বিএনপির ২৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বলেও জানা গেছে। জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে দলের কর্মকৌশল নিয়ে গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া। এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। উভয় বৈঠকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রেখে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের কথা বলতে বলা হয়েছে। তারা বোঝাতে সক্ষম না হলে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহানের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কথা বলিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতেও কাজ না হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অথবা চেয়ারপারসনের সঙ্গে বিদ্রোহীদের কথা বলার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও দলের কোনো প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করলে ১৩ ডিসেম্বরের পর তাকে দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা আশা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে ইতিমধ্যে অনেকেই ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আশা করছি, ১৩ ডিসেম্বরের পর বিএনপির কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। যারা স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াবেন, স্বাভাবিকভাবে দলও তাদের পাশে দাঁড়াবে। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় তাদের যুক্ত করা হবে। জানা যায়, কাল শনিবার দলের ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবেন বেগম জিয়া। ওই বৈঠকে বিএনপি প্রধান নেতাদের দিকনির্দেশনা দেবেন। এরপরই সাংগঠনিক টিম গঠন করা হবে। ১৬ ডিসেম্বরের পর কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামবেন। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর থেকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে যোগ দেবেন। জানা যায়, আট বিভাগীয় কমিটির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি উপ-কমিটিও গঠন করা হবে। সব মিলিয়ে ১৯টির বেশি হবে না বলে জানান কেন্দ্রীয় এক নেতা। এদিকে ঋণখেলাপিসহ নানা ত্রুটির কারণে ১২টি পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটিতে আপিল করা হয়েছে। গতকাল মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভায় আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থী।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী বাদশাহ। তিনি বর্তমান মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি। ইতিমধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন। দলীয় প্রতীক না পেলেও নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, নির্বাচন করব। তবে ১৩ ডিসেম্বরের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।কালাই পৌরসভা বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুর রহমান তালুকদার। তিনি জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি। এরই মধ্যে দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার কাজ শুরু করেছেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে মাঠে থাকবেন বলেও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবদুল মতিন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া আতাউর রহমান মেয়র থাকাকালীন নানা দুর্নীতি করেছেন— এমন অভিযোগেই জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত হন। জামায়াতের সেই ছুড়ে ফেলা প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে মাঠে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব।’
তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বলে কিছু নেই। কয়েকটি পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের অনেকেই দলের পদধারী। আমরা আশা করছি, ১৩ ডিসেম্বরের পর কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবেও না। বিএনপির চলমান অবস্থা তারা অবশ্যই বুঝবেন। দলের একক প্রার্থীর পক্ষে নেতা-কর্মীরা কাজ করবেন।’