শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

নিজামুল হক বিপুল প্যারিস থেকে

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

প্যারিস সম্মেলনের একেবারে শেষ সময়ে এখন বিভিন্ন ইস্যুতে চলছে দর কষাকষি। এই দর কষাকষির শেষ পর্যায়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। প্যারিস সম্মেলনের দশম দিনে বুধবার স্থানীয় সময় বিকালে কপ-২১ এর প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন ফাবিয়াস ২৯ পৃষ্ঠার যে খসড়া দলিল প্রকাশ করেছেন তাতে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন প্যারিস সম্মেলনে সবাই যেন একটি কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছে। গত ১১ দিন ধরে চলা সম্মেলনে আশা-নিরাশার মধ্যে গতকাল বিকাল থেকে একটি আশার আলোই দেখতে পাচ্ছেন সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকরা। শেষ পর্যন্ত কৌশলে হলেও একটি আইনি বাধ্যবাধকতার চুক্তি হবে এমনটাই মনে করছেন তারা।

গতকাল সম্মেলনের একাদশ দিনে একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে প্যারিসের লা বুর্জে এলাকার বিশাল সম্মেলন কেন্দ্র জুড়ে বিভিন্ন  হলরুমে বিভিন্ন গ্রুপে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে চলেছে দর কষাকষি। তাপমাত্রা ১ দশমিক শূন্য ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনা, জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুভিটা হারা মানুষের আশ্রয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া, লস অ্যান্ড ড্যামেজ এবং অভিযোজন ও প্রশমন নিয়ে চলা এসব দর কষাকষিতে প্রত্যেক দেশই একটি কার্যকর সমাপ্তির দিকে অর্থাত্ লিগ্যালি বাইন্ডিং এগ্রিমেন্ট বা এলবিএ চুক্তিতে পৌঁছার আশা করছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সমন্বয়কারী ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্যারিসে একটা চুক্তি হবে। তবে প্রটোকল বা আইনি বাধ্যবাধকতার যে চুক্তি হওয়ার কথা সেটা হয়তো হবে না। যে চুক্তি হবে তাতে কী থাকবে সেটা এখনো পরিষ্কার হয়নি। তবে এই শতাব্দীর মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এক দশমিক শূন্য ৫ ডিগ্রি বা দুই ডিগ্রির নিচে রাখার বিষয়, অর্থায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কিছু কিছু বিষয় থাকবে বলে মনে হচ্ছে। এখন সম্মেলনের শেষ দিকে যাই সিদ্ধান্ত হোক না কেন— এর সবই একেবারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এর বাইরে কিছু হবে না।

অন্যদিকে জলবায়ু পর্যবেক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বুধবার বিকালে কপ প্রেসিডেন্ট যে ২৯ পৃষ্ঠার খসড়া দলিল প্রকাশ করেছেন তাতে এলডিসি, সিডস, আফ্রিকান দেশ এবং স্বল্পন্নোত, দরিদ্র ও জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর সব দাবিই ওঠে এসেছে। এগুলোর মধ্যে তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রিতে রাখা, লস অ্যান্ড ড্যামেজ, অর্থায়ন, ক্লাইমেট ডিসপ্লেসমেন্ট ফ্যাসিলিটিসহ সব দাবিই আছে প্যারিস খসড়ায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সব দাবিই হচ্ছে ব্র্যাকেটবন্দী। প্যারিসে লিগ্যালি বাইন্ডিং এগ্রিমেন্ট (এলবিএ) হবে। তবে সেটা হবে কৌশলে। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী যে কোনো দেশ চাইলে চার বছরের মাথায় বের হয়ে যেতে পারবে। আর এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে প্রযুক্তি হস্তান্তর।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটা নতুন রোল প্লে করছে এবারের সম্মেলনের শেষ দিকে এসে। তারা হাই অ্যাম্বিশান গ্রুপ নামে একটি নতুন গ্রুপ করেছে। তারা আফ্রিকান দেশগুলোকে ৮৪০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার লোভ দেখাচ্ছে। এতে ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ দেশ ঢুকেছে। এই গ্রুপের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ভারত ও চীনের মতো দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে। যেন তারাও এই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়। জলবায়ু পর্যবেক্ষক রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেটা করেছে এটা খুবই নিন্দনীয়। তারা চাচ্ছে ভারত ও চীনকে এই গ্রুপে ঢুকাতে। কিন্তু ভারত ও চীন বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রিতে রাখতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে সেটা দুই ডিগ্রিতে রাখতে। সঙ্গত কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এই নতুন গ্রুপ করেছে।

সর্বশেষ খবর