শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

খারাপ লোক এত শক্তি পায় কোথায়

প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, সমাজে অশুভ শক্তি বা খারাপ লোক, তারা এত শক্তি পায় কোথায়! তাদের কেউ না কেউ সরাসরি নয়, পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিজয়া পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজক সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিজয়া পুনর্মিলনী পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রত্যেক ধর্মেই কিছু না কিছু খারাপ লোক আছে। তারা সংখ্যায় নগণ্য। সময়ে সময়ে তারা মানুষের এমন অকল্যাণ করে যা অকল্পনীয়। তারা এত শক্তি পায় কোথায়। তারা আগে আমাদের সমাজের পণ্ডিত ব্যক্তিদের হত্যা করত। এখনো তারা ভালো লোকদের খুন করছে। তারা হয়তো আমাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে সহযোগিতা পায়। আমরা যদি প্রত্যেকেই সচেতন ও সজাগ হই, তাহলে দুর্নীতি, ঘুষ, সন্ত্রাস, হানাহানি থেকে সমাজ পরিত্রাণ পেতে পারে। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শামীম হাসনাইন, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। প্রধান বিচারপতি বিচারকাজে আইনজীবীদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আপনাদের পেশা শুধু টাকা আর্নিংয়ের (আয়ের) জন্য নয়। যারা গরিব পুরনো মামলার বিচার থেকে বঞ্চিত তাদের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে তারা কোর্টে বিচার পাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন সমাজ থেকে কোনো দিনই অন্যায় থেকে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে মেজরিটি ৯৫% বিচারক ও আইনজীবী। এখানে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আছেন। আমরা প্রত্যেকে একই পরিবারের সদস্য। সঙ্গত কারণে বিচার বিভাগ এবং আইনের শাসনের অভিভাবক হিসেবে আমি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আছেন। আপনাদের কাছে আমার একটা আবেদন। আজকে আমরা আইনের শাসনের কথা বলি। যে কারণে আজকে এ মহান পেশা প্রবর্তন করা হয়েছে। এটা তো শুধু আমরা, যারা অবস্থাপন্ন তাদের জন্য বড় বড় আইনজীবী নিয়োগ হবে। যারা গরিব তাদের জন্য নিয়োগ হবে না। যারা টাকা-পয়সা পান তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচার প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান আমাকে অভিযোগ করলেন, সুনামগঞ্জে একজন মহিলা বিচারকের কোর্ট বর্জন করা হচ্ছে। তার অপরাধ তিনি বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন কিছু পুরনো মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য। তিনি করছেন। দু-একজন আইনজীবী না বলছেন। তিনি হয়তো দু-একটা মন্তব্য করলেন।

এক জায়গায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে (বার কাউন্সিলে আইন করা হয়েছে যে পোশাক পরার জন্য) একজন আইনজীবী গেছেন পোশাক ছাড়া। আমার বিচারক বলছেন— আপনার পোশাকটা ঠিক হয়নি। আপনি ঠিক করে আসেন। ব্যস্, বয়কট শুরু। আরেক জায়গায় একজন জুনিয়র বিচারক বলছেন, তিনি পুরনো মামলায় মুলতবি দেবেন না। কিন্তু আইনজীবীরা বলছেন, পুরনো মামলায় হিয়ারিং করবেন না। ব্যস্, কোর্ট বয়কট।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মা দেবী দুর্গা মানুষের মাঝে আসেন শান্তির বার্তা নিয়ে। দেশে আজ যে অশুভ শক্তির আবির্ভাব হয়েছে বিচার বিভাগ যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় তাহলে অনেক অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। জুডিশিয়ারি যদি পদানত হয়ে যায় তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কিছুই হবে না।

সর্বশেষ খবর