রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বদলি আদেশ মানেন না ডিএমপির এসআইরা

আলী আজম

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কতিপয় সদস্য দিন দিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ অমান্য, চাকরিবিধি লঙ্ঘন করাসহ শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য সরকারি আদেশে কঠোর হুঁশিয়ারি আর শাস্তিভীতির পরোয়া তারা করছেন না। কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করাটা ডিএমপি অ্যাক্টের-২০০৬ ‘চ’ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তা সত্ত্বেও অভিযুক্তদের অধিকাংশই বিভাগীয় শাস্তির আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। জনস্বার্থে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় কর্মরত ৪২ এসআইকে (অপারেশন অফিসার) গত ২ ডিসেম্বর একযোগে ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। ডিএমপি কমিশনারের পক্ষে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের (অ্যাডমিন, ইন্সপেকশন অ্যান্ড অডিট) স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, বদলির আদেশপ্রাপ্ত এসআইকে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নিমিত্তে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাড়পত্র দেবেন। অন্যথায় ৬ ডিসেম্বর থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে তারা ‘অবমুক্ত’ গণ্য হবেন। এ আদেশপত্র ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। কিন্তু ৪২ জনের অধিকাংশই নতুন বিভাগে যোগ দেননি। সূত্র জানায়, বদলিকৃত এসআইদের মধ্যে মতিঝিল বিভাগ থেকে এসআই হেলাল উদ্দিন, সুশংকর পাল, শেখ ফরিদ উদ্দিন, শ্যামল চন্দ্র ধর, শরীফুল ইসলাম, ইব্রাহীম খলিল ও নিরু মিয়াকে লালবাগ বিভাগে; রমনা বিভাগ থেকে এসআই কামরুল ইসলাম, বশিরুল হক, জিয়াউল ইসলাম, মাযহারুল আনোয়ার ও আসাদুজ্জামানকে ওয়ারী বিভাগে; লালবাগ বিভাগ থেকে এসআই রফিকুল ইসলাম, মমিনুল হক ও জয়নাল আবেদীন মণ্ডলকে মতিঝিল বিভাগে; উত্তরা বিভাগ থেকে মাসুদ আলম, সাইফুল ইসলাম ও আরিফুর রহমানকে গুলশান বিভাগে; মিরপুর বিভাগ থেকে এসআই তানভীর হাসান, জহির রায়হান, মেহেদী হাসান, জিয়াউল হক, জালাল উদ্দিন, আফজাল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও আমিনুল ইসলামকে তেজগাঁও বিভাগে; ওয়ারী বিভাগ থেকে এসআই জহিরুল আলম, আবুল হাসান ভূইয়া, এমরানুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন খান, আবদুর রহমান, রফিকুল ইসলাম ও আসলাম উদ্দিন মোল্লাকে রমনা বিভাগে; তেজগাঁও বিভাগ থেকে সুজিত কুমার সাহা, মাসুদ পারভেজ, আমিনুল ইসলাম ও আহাদ আলীকে মিরপুর বিভাগে; গুলশান বিভাগ থেকে এসআই শেখ সোহেল রানা, ওবায়দুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, গোলাম ফারুক ও এসআই জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীরকে উত্তরা বিভাগে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। জানা গেছে, এদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তা নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়াও কয়েকজন বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নতুন বিভাগে বদলির আদেশ বাতিল করে অন্য বিভাগে বদলির জন্য জোর তদবির চালাচ্ছেন। ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের আদেশ থাকা সত্ত্বেও গতকাল পর্যন্ত নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি রমনা থানার কামরুল ইসলাম, মিরপুর থানার তানভীর হাসান, গুলশান থানার শেখ সোহেল রানা, রূপনগর থানার মোস্তাফিজুর রহমান, বাড্ডা থানার ওবায়দুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মাসে পদে পদে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, চাকরিবিধি লঙ্ঘন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ-নির্দেশ পালন না করার ধৃষ্টতা, কর্তব্যে চরম অবহেলা, অসদাচরণ, অপরাধ বিধিকে যথেচ্ছ প্রয়োগ, অজ্ঞতা-অদক্ষতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সহস্রাধিক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ কনস্টেবল থেকে শুরু করে এএসআই, এসআই ও ইন্সপেক্টর পদবির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগের মাত্রা বেশি। বিভাগীয় পর্যায়ে নানা রকম তদন্ত প্রতিবেদন, পদস্থ কর্মকর্তার বিশেষ নোট প্রদান, সুপারিশ চালাচালি হলেও এসব অভিযোগের গুরুদণ্ডের দৃষ্টান্ত নগণ্য। ফলে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না পুলিশে চাকরিবিধি লঙ্ঘনসহ শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধ।

সর্বশেষ খবর