রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কিছুই মেলে না নাটোর ‘আধুনিক’ হাসপাতালে

নাটোর প্রতিনিধি

কিছুই মেলে না নাটোর ‘আধুনিক’ হাসপাতালে

নাটোর আধুনিক হাসপাতাল নামেই আধুনিক। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় রূপান্তর করা হলেও চিকিত্সাসেবার কিছুই মেলেনা এখানে। হাসপাতালের সর্বত্রই শুধু ‘নেই আর নেই’। নানা সমস্যা আর অব্যস্থাপনায় জর্জরিত এ হাসপাতাল ধুঁকছে বহুবিধ সংকটে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালের এই বেহাল দশাকে পুঁজি করে চারপাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টার । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও মাত্র ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কাজ করছে নাটোর সদর আধুনিক হাসপাতাল। এ কারণে জেলার প্রায় ১৭ লাখ মানুষ আধুনিক চিকিত্সাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার নাটোর সদর হাসপাতালটি ১৯৯৫ সালের মে মাসে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়ে নাটোর আধুনিক হাসপাতাল নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ২০১১ সালে একে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।  কিন্তু সবকিছুই কাগজে-কলমে। ফলে ২০ বছর ধরে নাটোরের মানুষ আধুনিক চিকিত্সাসেবা না পেলেও আধুনিক হাসপাতালের বিল্ডিং দেখে আসছেন। এ অবস্থায় এ ‘আধুনিক’ হাসপাতালের মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে- রোগী এলেই ‘এটা তো নাই, ওটাতো নাই, আমাদের কিছুই করার নাই’ বলে বিদায় করে দেওয়া। তবে এখানে জরুরি চিকিত্সাসেবা বলতে মেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করার রিলিজ স্লিপ। ‘আধুনিক’ এই ‘আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালে থাকা ৫০ শয্যার জনবলেও রয়েছে নানান ঘাপলা। চিকিত্সা নিতে আসা রোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী,  আন্তর্বিভাগের রোগীদেরকে বেশিরভাগ ঔষধই কিনতে হয় বাইরে থেকে। হাসপাতালের কোনো বাথরুমই ব্যবহার উপযোগী নয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখায় সেগুলো দুর্গন্ধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ইসিজি মেশিন থাকলেও দালালদের খপ্পরে পড়ে বাইরে থেকে সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। কখনো কখনো বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ইসিজি মেশিন হাসপাতালের ওয়ার্ডে বসিয়ে হাসপাতালবহির্ভূত বাণিজ্য করা হয়। কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই এসব হয়, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দেখেন না। রোগীরা প্রতিবাদ করলে দালালদের রোষাণলে পড়তে হয়। শুধু দালাল নয়, হাসপাতাল জুড়ে চোরে ভয়াবহ উপদ্রব। রোগী ও তার স্বজনদের টাকা ও মোবাইল প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালটিকে নারীবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হলেও নারীদের চিকিত্সায় এখানে কোনো নারী চিকিত্সক নেই। গাইনি কনসালটেন্ট, সার্জারি-মেডিসিন-ইএনটি-চর্ম-যৗন রোগ ও অর্থোপেডিক্স কনসালটেন্টের পদগুলো বছরের পর বছর ধরে শূন্য রয়েছে। ২ জন মেডিকেল অফিসারের পদসহ প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, ডেন্টাল সার্জন এবং আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসারের পদগুলোও শূন্য রয়েছে। ফলে রোগীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এছাড়া নার্স পদে ৩ জন, স্বাস্থ্য শিক্ষা পদে ২ জন, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার পদে ১ জন, মশালচি পদে ১ জন এবং কুক পদে কোনো লোক নেই। নৈশ প্রহরীরও কোনো পদ নেই এ হাসপাতালে। নিরাপত্তা কর্মীর কোনো পদ না থাকায় হাসপাতালে দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সূত্র আরও জানায়, হাসপাতালে সার্জারি বিশেষজ্ঞের অভাবে অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার পথে। ল্যাপ্রোস্কোপিক মেশিন কয়েক বছর আগে আনার পর থেকে ব্যবহার করা হয়নি। অত্যাধুনিক আল্ট্রা সনোগ্রাম মেশিন, দুটি ইসিজি মেশিন ব্যবহারের অভাবে অকেজো হওয়ার পথে। হাসপাতালের বিদ্যুত্ সরবরাহ ব্যবস্থাও একেবারে নাজুক। অব্যাহত লোডশেডিংয়ে হাসপাতালের রোগীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। হাসপাতালে বিদ্যুতের ডবল ফেস করা হলে এ দুর্ভোগ কাটে। কিন্তু উদ্যোগের অভাবে এ কাজটি হচ্ছে না। সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ৫০ শয্যা থেকে ২৫০  শয্যায় উন্নীত হলেও সে অনুযায়ী লোকবল বাড়েনি। ভিড়ের কারণে পকেটমার ও দালালের উপস্থিতি ঘটে। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। দালালদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে। বিচারে তাদের জেল-জরিমানা হয়েছে। কিন্তু এরপরও তারা ফিরে এসে একই কাজ করছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রধান সমস্যা আবাসন সংকট। এই সমস্যাগুলো সমাধানে হাসপাতালের কোনো কর্তৃত্ব নেই। এগুলো দেখার দায়িত্ব এইচইটি বিভাগের। বিষয়গুলো তাদের সার্বক্ষণিক অবগত করা হয়। জেনারেটরটি পড়ে আছে অকেজো হয়ে। ফলে বিদ্যুত্ চলে গেলে জরুরি অপারেশনসহ ভুক্তভোগীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। সিভিল সার্জন ডা. ফেরদৌস নিলুফার বলেন, ২৫০ বেডে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকায় জনবল বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আর ফান্ড না পাওয়ায় বিদ্যুত্ লাইনের সমস্যা, যন্ত্রপাতি, কেবিন সংকট, টয়লেট সমস্যা দূর করা সম্ভব হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর