শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভাতা বাড়ছে যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের

১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মাসিক ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত সারসংক্ষেপে বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা, বীর উত্তমদের ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার, বীর বিক্রমদের ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার এবং বীরপ্রতীকদের ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে মাসিক সম্মানী ভাতা ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। প্রতি ক্ষেত্রে ভাতা বৃদ্ধির এই হার ১৫০ শতাংশ। গত ৯ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠান ওই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ। সারসংক্ষেপ হাতে পাওয়ার পর পরই অর্থমন্ত্রী সেটি অনুমোদন করে ‘উত্তম প্রস্তাব’ বলে নোট লিখে দেন। সম্মানী ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে তার সুফল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব থেকেই রাষ্ট্র তাদের সম্মানী ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রস্তাবিত বেতন-ভাতা কাটছাঁট করে চূড়ান্ত করা হলেও খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যা প্রস্তাব করেছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার সব, এমনকি দু-একটি ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি ভাতার প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধারা কেউ জীবিত না থাকায় তাদের জন্য কোনো ভাতার প্রস্তাব করেনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার যেহেতু ভাতা পাচ্ছে সেই হিসেবে অর্থ বিভাগ নিজে উদ্যোগী হয়ে বর্তমানের চেয়ে ১৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতা ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করলেও অর্থ বিভাগ আরও এক হাজার টাকা বাড়িয়ে সেটি ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতাও বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী ‘এ শ্রেণি’র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার জন্য সাকুল্যে ৪৮ হাজার টাকা, ‘বি শ্রেণি’র জন্য ৩৫ হাজার টাকা, ‘সি শ্রেণি’র জন্য ২৮ হাজার টাকা এবং ‘ডি শ্রেণি’র জন্য ১৭ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। তবে অর্থমন্ত্রী সারসংক্ষেপে ‘ডি শ্রেণি’র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মাসিক ভাতা ১৮ হাজার টাকা করার পরামর্শ দেন। বর্তমানে ‘এ শ্রেণি’র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা, ‘বি শ্রেণি’ ২০ হাজার টাকা, ‘সি শ্রেণি’ ১৬ হাজার টাকা এবং ‘ডি শ্রেণি’ ৯ হাজার ৭০০ টাকা করে মাসিক সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। অর্থ বিভাগের প্রস্তাবে মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মাসিক ভাতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সমান করে মোট ২২ হাজার টাকায় উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে শহীদ ও মৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। প্রস্তাবিত সারসংক্ষেপে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের এ, বি, সি ও ডি এই চার শ্রেণি থেকে হ্রাস করে তিন শ্রেণিতে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বি ও সি শ্রেণি একীভূত হয়ে যাবে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের জুলাইয়ে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর রয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বর্ধিত সম্মানী ভাতা ওই বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর রয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৬৭৬ জনকে খেতাব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন, বীর উত্তম ৬৮, বীরবিক্রম ১৭৫ জন এবং বীরপ্রতীক ৪২৬ জন। বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার মাসিক ২০০ টাকা, বীর উত্তম ১৫০ টাকা, বীরবিক্রম ১২৫ টাকা এবং বীরপ্রতীক ১০০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা পাচ্ছিলেন। পরে ২০১১ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী ২০১১ সালে তাদের ভাতা বাড়ানো হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে একটা অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। কারণ সশস্ত্র বাহিনীর ভিতর থেকে যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তাদের ভাতা বাড়ানো হলেও যারা সশস্ত্র বাহিনীর বাইরে ছিলেন অর্থাত্ বেসামরিক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়নি। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে সামরিক ও বেসামরিক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমন্বিত একটি নীতিমালা করে ২০১৩ সালে। ওই বছরেই ‘খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান নীতিমালা ২০১৩’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

সর্বশেষ খবর