শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে মর্যাদার লড়াই শক্ত অবস্থানে বিএনপি

প্রচারণায় সরগরম রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

আওয়ামী লীগে মর্যাদার লড়াই শক্ত অবস্থানে বিএনপি

প্রার্থীদের সরগরম প্রচারে এখন উত্তাল রাজশাহীর ১৩ পৌরসভার পাড়া-মহল্লা। কোনো প্রার্থী বসে নেই। সবাই নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রচারণায়। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর প্রার্থীদের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে ভোটের মাঠ। কোথাও ফাঁকা নেই। পথে পা বাড়ালেই চোখে পড়ে প্রার্থীদের পোস্টার। মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ঢাকা পড়েছে পুরো এলাকা। চায়ের দোকানগুলোয় মানুষের জটলা। মুখরোচক আলাপ-আলোচনা। কে জিতবেন, কার অবস্থান কেমন, কাকে ভোট দেওয়া যায়— এমন হিসাব-নিকাশ কষছেন সবাই। এরই মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে তর্ক-বিতর্কেও জড়িয়ে পড়ছেন। উত্তেজনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তা আবার নিমেষেই প্রশমিত হচ্ছে। আর প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন নানা ধরনের উন্নয়নের ফিরিস্তি আর প্রতিশ্রুতি। রাজশাহীর ১৩ উপজেলায় পৌর নির্বাচনে মেয়রদের জয়-পরাজয় এরই মধ্যে প্রেস্টিজ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে স্থানীয় দলীয় নেতাদের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে রীতিমতো প্রেস্টিজ ইস্যু হয়েছে একজন প্রতিমন্ত্রী ও ছয়জন এমপির। আর বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিভক্তি থাকলেও ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত একাট্টা হয়ে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন। রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ীতে চার পৌরসভার নির্বাচন। এ চারটি পৌরসভায় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন, বিএনপি ও জামায়াতের একজন করে মেয়র ছিলেন। এবারও তারা প্রার্থী হয়েছেন। এখানকার এমপি ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর জন্য দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর ক্ষেত্রে প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুই উপজেলার তানোর, মুণ্ডুমালা, গোদাগাড়ী ও কাঁকনহাটে রয়েছেন বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থীও। তাদের পেছনে আছেন একসময়ের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। স্থানীয়রা বলছেন, এ দুই উপজেলায় পৌর নির্বাচনের আড়ালে চলছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের প্রেস্টিজ ইস্যু। জেলার পবা ও মোহনপুর উপজেলায় তিনটি পৌরসভা (নওহাটা, কেশরহাট ও কাটাখালী)। এখানে মর্যাদার লড়াই শুরু হয়েছে স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিনের। তার আশা তিনটিতেই বিদ্রোহী দমনে সমর্থ হওয়ায় তাদের প্রার্থী বেরিয়ে আসবেন। জেলার বাঘা ও চারঘাটে আড়ানী ও চারঘাট পৌরসভায় নির্বাচন নিয়ে প্রেস্টিজ ইস্যু বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের। এখানে একজন নারী প্রার্থী আছেন। বিপরীতে আছেন বিদ্রোহীও। ফলে এখানে বিএনপির শক্ত অবস্থান ভেদ করে আওয়ামী লীগকে জয় পেতে বেগ পেতে হবে। এ ছাড়া জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলায় আরও চারটি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এগুলো হলো ভবানীগঞ্জ, তাহেরপুর, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া। দুর্গাপুর ও পুঠিয়ায় স্থানীয় এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা তার দুটি পৌরসভায় বিদ্রোহী দমনে ব্যর্থ হয়েছেন। এ দুটিতে বিএনপির প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে আছেন। ফলে সরকারদলীয় প্রার্থীদের জয়ের সাফল্য নিয়ে সংশয় আছে। বাগমারার দুটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক তার সমর্থিত প্রার্থীদের জেতানোর জন্য কাজ করছেন। সরাসরি এসব এমপি ও প্রতিমন্ত্রী ভোটের মাঠে না থাকলেও তাদের কৌশল অবলম্বন করেই প্রার্থীরা চষে বেড়াতে শুরু করেছেন ভোটের মাঠ। সব মিলিয়ে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মাঠের প্রচারণা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন জেলায় সর্বত্র কোণঠাসা বিএনপিও মাঠে নেমেছে শক্ত হয়ে। ভোটাররা বলছেন, জেলার সব উপজেলায় নৌকা প্রতীকের সঙ্গে তুমুল লড়াই হবে ধানের শীষের। বিএনপির প্রার্থীরাও সর্বশক্তি নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন। গত নির্বাচনে জেলার এ ১৩ পৌরসভার মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সাতটিতে বিএনপি ও দুটিতে জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন। তবে এবার বেশির ভাগ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী দমনে সফল হওয়ায় জয়ের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

সর্বশেষ খবর