শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জনবল আর যন্ত্রপাতি সংকটে বেহাল যশোর হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

জনবল আর যন্ত্রপাতি সংকটে বেহাল যশোর হাসপাতাল

জনবল আর যন্ত্রপাতি সংকটে বেহালদশা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের। ২০০৩ সালে এ হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় ২৮ শয্যার করোনারি কেয়ার ইউনিট। পরে ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

জানা যায়, হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৬০০-এর বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী আসেন ১২০০ থেকে ১৬০০ পর্যন্ত। এর সঙ্গে জনবল ছাড়াই করোনারি কেয়ার ইউনিট ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় সব কিছুই চলছে ২৫০ শয্যার জনবল দিয়ে। ফলে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনে। প্রতিবেদনে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিত্সকের দায়িত্বহীনতা, অমানবিক ইউনিট প্রথা, জরুরি বিভাগের বেহালদশা এবং রোগ নির্ণয়সহ বেশির ভাগ যন্ত্রপাতির করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়। এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতর যুগ্মসচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদনের সত্যতা পায় এবং কয়েকজন চিকিত্সকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। এর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সোমবার সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এক বছর আগে প্রতিবেদনে যেসব অসংগতি তুলে ধরা হয়েছিল, তার বেশির ভাগ তেমনই আছে। জরুরি বিভাগ আছে প্রায় আগের মতোই। আটটি ট্রলির মধ্যে সচল আছে চারটি। হুইল চেয়ার দুটি নষ্ট। সম্প্রতি রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে একটি নতুন হুইল চেয়ার যুক্ত হয়েছে। চারটি অ্যাম্বুলেন্সের দুটি নয় বছর ধরে নষ্ট। বাকি দুটি সচল থাকলেও তা রোগীর চেয়ে অন্যদের সেবায় বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৬০০ পর্যন্ত রোগী আসেন। তাদের জন্য চিকিত্সক মাত্র ১৫-১৬ জন, তারাও ঠিকমতো সময় দেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজস্ব ও উন্নয়ন খাত, ডেপুটেশনে আসা চিকিত্সক, ইন্টার্ন চিকিত্সক ও যশোর মেডিকেল কলেজের চিকিত্সক মিলিয়ে মোট ১২৮ জন চিকিত্সক আছেন। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে এ সংখ্যা ঠিক থাকলেও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও করোনারি কেয়ার ইউনিট হিসেবে এ সংখ্যা খুবই কম। রয়েছে জুনিয়র ডাক্তারের সংকট। রোগীর প্রায় সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। রোগ নির্ণয়ের প্রায় সব যন্ত্রই পুরনো ও অকেজো হয়ে গেছে। মাইক্রোস্কোপ আটটির মধ্যে চারটি নষ্ট, ক্লোরোমিটার দুটির একটি নষ্ট। ব্লাড ব্যাংকের প্রায় সব যন্ত্রপাতিই অচল। শিশুদের ছয়টি ইনকিউবেটরের কার্যকারিতা বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। ১৬টি সাকার মেশিনের আটটি নষ্ট। চারটি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের মধ্যে দুটি নষ্ট। দুটি ল্যাপারোস্কপি মেশিনের একটি সচল। এক্স-রে মেশিন কার্যক্রম আছে মাত্র একটি। সিটি স্ক্যান, এমআরআইর মতো আধুনিক কোনো মেশিন নেই। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড নেই। করোনারি কেয়ার ইউনিটের কোনো জনবল নেই। ২৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চালানো হচ্ছে। এক ইউনিটের ডাক্তারদের প্রেসক্রাইব করা রোগী অন্য ডাক্তাররা দেখেন না বলে আভিযোগ রোগীদের। এসব বিষয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ সাহা বলেন, আউটডোরে ডাক্তাররা এখন ঠিকমতো বসেন। তবে রোগীর চাপ হওয়ায় কিছু করার থাকে না। এক ইউনিটের ডাক্তার অন্য ইউনিটের রোগী দেখেন না, এটা ঠিক। এখন যে জনবল আছে, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে তা ঠিক আছে। কিন্তু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও করোনারি কেয়ার ইউনিট একসঙ্গে হিসাব করলে জনবল খুবই কম। মেডিকেল কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল হতে আরও ১০ বছর লেগে যেতে পারে। ২০-৩০ জন জুনিয়র ডাক্তারের পদ সৃষ্টি জরুরি। কেয়ার ইউনিটের জন্য ৭৮টি পদ সৃষ্টির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার দরকার। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সংকটের কারণে হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে। নার্সের সংখ্যা কম। কেবিন আছে মাত্র পাঁচটি। অন্তত ২০টি কেবিনের একটি ওয়ার্ড দরকার। রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতির বেহালদশার কথা স্বীকার করে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, বেশির ভাগই পুরনো হয়ে গেছে। প্রতিদিন চার-পাঁচ জন করে আসামি ভর্তি থাকেন। তাদের পাহারা দিতে কয়েকজন পুলিশকে থাকতে হয়। এতে রোগীদের সেবা ব্যাহত হয়। এ জন্য একটি প্রিজন সেল জরুরি। এসব চাহিদা ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর