শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

সহস্র বছর আগের স্মৃতি ‘মাহিসন্তোষ’

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

সহস্র বছর আগের স্মৃতি ‘মাহিসন্তোষ’

‘মাহিসন্তোষ’ নওগাঁ জেলায় অবস্থিত পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তঘেঁষা চৌঘাট মৌজায় এই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিটির অবস্থান।

ধামইরহাট সদরের ফারসিপাড়া থেকে পশ্চিমমুখী কাঁচা সড়ক ধরে ৬ কিলোমিটার চলার পর প্রত্নস্থলটিতে পৌঁছানো যায়। সেখানে এখন একটি মাঝারি আকারের প্রাচীরঘেরা চতুষ্কোণাকার দুর্গ রয়েছে। আরও রয়েছে কয়েকটি দিঘি, পুকুর, রাজবাড়ি ও বারোদুয়ারী নামের একটি ঢিবি এবং মাজার। দুর্গের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তঘেঁষা প্রশস্ত খালও রয়েছে। প্রত্নস্থলটির উত্তর প্রান্তে চারটি অসম বাহুর সমন্বয়ে দুর্গটি তৈরি। চতুষ্কোণ দুর্গটির পূর্ব বাহু ২৩২ মিটার, দক্ষিণ বাহু ১৯২ মিটার লম্বা। মাটির প্রাচীরগুলো আজও ৩.৫ মিটার উঁচু এবং ১৬.৭৬ মিটার চওড়া। দুর্গের বাইরে পূর্ব দিকে পুরোপুরি এবং উত্তর দিকে কয়েক মিটার ঘিরে যে সংলগ্ন খাল রয়েছে, সেটি গড়ে ২৫ মিটার চওড়া এবং ২.৭৫ মিটার গভীর। দুর্গের ভিতরের অংশের জমি এবড়ো-থেবড়ো। বিভিন্ন স্থানে পাটকেল ও খোলাম কুচির ঘন সমাবেশ লক্ষ্য করা যায়। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ঘেঁষে বাইরের দিকে মাজার নামে একটি স্থান রয়েছে। এর ভিতরে পাশাপাশি দুটি কবর আছে। লোকে বলে এ দুটি কবর মাহিসন্তোষ ও তার কন্যার। এ ছাড়া মাজারের বাইরে আরও একটি কবর রয়েছে। এটি হলো এক উজিরের। কবরটি ১৪ হাত লম্বা। সামান্য পশ্চিমে আরও কয়েকটি পুরনো কবরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। লোকে বলে, এগুলোও উজিরের কবর। এর দক্ষিণ-পূর্বে রাজবাড়ি। পশ্চিম দিকে একটি অবতল মেহরাবসহ উত্তর-দক্ষিণে লম্বা একটি ভাঙা ইটের দেয়ালের চিহ্ন দেখা যায়। দেয়ালটির কয়েকটি স্থানে পাথরের বহিরাবর্ণের চিহ্ন রয়েছে। পশ্চিম দেয়ালের সমান্তরালে কিছু দূর পূর্বে এক সারি (বর্তমানে দুটি) পাথরের থামও দাঁড়ানো রয়েছে।

মাহিসন্তোষের সঠিক ইতিহাস জানার কোনো সূত্র পাওয়া না গেলেও লোকমুখে প্রচলিত আছে, চৌঘাট বা এর আশপাশে প্রাক-ইসলামী আমল থেকেই কোনো না কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কেন্দ্রের অস্তিত্ব ছিল। সেই কেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষের ওপরই খ্রিস্টাব্দ ১৩ শতকের মুসলিম বিজেতারা কোনো একটি সেনা শিবির গড়ে তুলেছিলেন। সেই সেনাশিবির অন্তত ১৬ শতক পর্যন্ত টিকে ছিল। আবার অনেকের বিশ্বাস, বখতিয়ার খিলজি আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর তার স্থলাভিষিক্ত ইজউদ্দীন মোহাম্মদ শিরান খিলজি (খ্রিস্টাব্দ ১২০৭ থেকে ১২০৮ সাল) এখানেই নিহত ও কবরস্থ হয়েছিলেন। তাছাড়া এটি ছিল সুলতানি আমলের বারবকাবাদ প্রশাসনিক এলাকার টাঁকশাল। এ প্রত্নস্থলে ১৯১৮ সালে তদানীন্তন বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি সীমিত আকারে খনন পরিচালনা করেছিল। ওই সময় এ ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি পাথরের উত্কীর্ণ অবতল মেহরাব পাওয়া যায়। যা ওই সমিতির রাজশাহীর সংগ্রহশালায় (বর্তমানে বরেন্দ্র জাদুঘর) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রথম ধ্বংসস্তূপটি থেকে ১৫০৬-১৫০৭ সালের জনৈক সুহাইলের পুত্রের নির্মিত একটি মসজিদ সম্পর্কিত আরবি ভাষ্য উত্কীর্ণ একটি পাথরের ফলক আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেটিও বর্তমানে রাজশাহী শহরের বরেন্দ্র জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

সর্বশেষ খবর