রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

হলুদ ফুলে হাসছে মাঠ

জিন্নাতুন নূর, মানিকগঞ্জ থেকে ফিরে

হলুদ ফুলে হাসছে মাঠ

খেতের পর খেত হলদে রঙের সরিষা বাগান। মাঠজুড়ে হলুদ সে আভায় আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছির দল ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে মধু আহরণে। অপরূপ সেই দৃশ্য দেখলে চোখ-মন দুই-ই জুড়ায়। শীতের শেষ বিকালে নরম রোদ যখন সরিষা খেতের ওপর খেলে যায় তখন চারপাশের প্রকৃতি আরও সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। পৌষের এই সময়ে সরিষা খেত গ্রাম-বাংলার রূপকে আরও বেশি অপরূপ করে তোলে। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ধরলা ব্রিজ ধরে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে হলুদের সাম্রাজ্য। এরপর যতই ভিতরে যাওয়া যায় গ্রামের মেঠো পথের দুই পাশে দেখা যাবে সরিষা খেত। সিঙ্গাইরের কৃষকরা এখন সকাল-বিকাল সরিষা খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ কেউ সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছর আবহওয়া ভালো হওয়ায় সরিষার ফলন অন্য বছরগুলোর চেয়ে ভালো। বুধবার সিঙ্গাইরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এই এলাকার বেশিরভাগ শস্য খেতেই এখন সরিষার চাষ হচ্ছে। সরিষা গাছের হলুদ ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে কীট। যার মধ্যে আছে মধু আহরণকারী মৌমাছিও। দুপুরে কৃষকরা তাদের খেতে গিয়ে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন। জানতে চাইলে আবদুল কুদ্দুস নামের এক কৃষক বলেন, ধান-সবজির পাশাপাশি এখন আমরা প্রতি মৌসুমে সরিষা চাষ করি। এতে ভালোই লাভ হচ্ছে। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি চার থেকে পাঁচ মণ সরিষা উত্পাদন সম্ভব। আর প্রতি মণ সরিষার মূল্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এদিকে মানিকগঞ্জে মধু সংগ্রহে আসা এক মৌচাষি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তারা খেত থেকে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করে ঢাকায় বিক্রি করেন। সরিষা চাষকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে এই জেলায় মৌচাষিদের তত্পরতা বেড়েছে। মৌসুমে গড়ে একজন মৌচাষি ২০ থেকে ২৫ মণ মধু আহরণ করতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক মৌচাষি সাত্তার এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি গত এক দশক ধরে সরিষা থেকে মধু সংগ্রহ করে তা ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করছেন। এই মৌসুমি ব্যবসা থেকে তার ভালো উপার্জন হয়। মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আলীমুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বছর সরিষার ফলন নিয়ে আমরা আশাবাদী। সরিষা ৭০ থেকে ৭৫ দিনের একটি ফসল। কৃষকরা এখন ধান উত্পাদনের পর ফসলের মাঠ ফেলে না রেখে লাভজনক এই ফসলটি উত্পাদন করছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মৌচাষও। আশা করা হচ্ছে সরিষা থেকে এবার শুধু মানিকগঞ্জ থেকে কোটি টাকার মধু পাওয়া যাবে। মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সরিষা রবি মৌসুমের ফসল। সিঙ্গাইর ইউনিয়নের আবাদি জমির ৩০-৪০ শতাংশ ভূমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। এবার মানিকগঞ্জের ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। সরিষা একটি তৈল বীজ জাতীয় অর্থকরী ফসল। কৃষকরা সাধারণত নিজের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট ফসল বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন। চলতি বছর সরিষার ফলন ভালো। এবার মানিকগঞ্জ জেলা থেকেই কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৩৫ টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সাধারণত বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। সরিষার ঝরে পড়ে পাতা ও ফুল জৈব সার হিসেবে কাজ করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর