রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
৫২তম বিশ্ব ইজতেমা

পাকিস্তানসহ ১০ দেশের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা

মোস্তফা কাজল

বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে ১০ দেশের নাগরিকদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ কারণে পাকিস্তানসহ ১০ দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদান ও চলাফেরার ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে আজ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে এ সব বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রস্থল কাকরাইল মসজিদের আমির এবং ইজতেমার সংগঠকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর উপকণ্ঠে টঙ্গীর তুরাগ তীরে ৮ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে তাবলীগ জামাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা। বিদেশি ২০ হাজারসহ ১০ লক্ষাধিক মুসল্লি এবারের ইজতেমায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত-শিবিরসহ সরকারবিরোধী নাশকতাকারীরা তাবলিগ জামাতের ছদ্মবেশে নিজেদের আড়াল করছে। তারা ইজতেমা মাঠেও নাশকতা চালাতে পারে। এ তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইল কেন্দ্রীয় মসজিদের তাবলিগ সংগঠকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ধর্ম সচিব চৌধুরী বাবুল হাসান বলেন, আমরা ইজতেমার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। জানা গেছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশে চলমান সহিংসতার ঘটনার প্রেক্ষাপটে এবারের ইজতেমার নিরাপত্তায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। দুই পর্বের এ ইজতেমাকে ঘিরে থাকছে এক সপ্তাহব্যাপী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আগামী সপ্তাহে এ কার্যক্রম শুরু হবে। পুলিশ ও র্যাব সদর দফতর সূত্র জানায়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এবারের ইজতেমায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সরকারকে আগাম তথ্য দিয়েছে। গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় ও তাবলিগ জামাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইজতেমা মাঠের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

১০ দেশের ব্যাপারে সতর্কতা : সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতে অন্তত ১০ দেশের নাগরিকদের আসা ও যাওয়ার ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সতর্কতা আরোপ করা দেশগুলো হল- পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সুদান, সিরিয়া, জর্ডান, মিসর ও ইয়েমেন। সূত্র জানায়, দেশের বাইরের জঙ্গিগোষ্ঠী ছাড়াও দেশের নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ সতর্ক আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার ইজতেমাস্থল টঙ্গীর মাঠসহ আশপাশ এলাকায় ৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করে প্রায় ২০ হাজার পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে বিজিবি সদস্যরা। এছাড়াও বিদেশি মেহমানদের জন্য থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আকাশ পথে টহল দেবে র্যাবের হেলিকপ্টার। ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, ৮ জানুয়ারি ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রথম পর্বের তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ১০ জানুয়ারি। এরপর দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনের ইজতেমা শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি। ১৭ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্বের এ আয়োজন। এবারও ৩২ জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান নেবেন মুসল্লিরা। তুরাগ তীরবর্তী ১৬০ একর বিস্তৃত ময়দানের উত্তর-পশ্চিমে তৈরি হচ্ছে বয়ান মঞ্চ। পশ্চিম প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে বিদেশি মেহমানদের থাকার ব্যবস্থা। গতকাল থেকে বিদেশি মেহমানরা ইজতেমায় আসতে শুরু করেছেন। তারা এখন কাকরাইল মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোতে ঘুরে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর