সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আত্মঘাতী সংঘাত যেন আর না হয়

বিজিবি দরবারে প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

আত্মঘাতী সংঘাত যেন আর না হয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আশা ব্যক্ত করে বলেছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল সকালে পিলখানা সদর দফতরে বিজিবি দিবস-২০১৫ উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের তিনি এ নির্দেশনা দেন। খবর বিএসএস ও বিডিনিউজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি প্রথমে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। পরে বিজিবির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৫৬ জনকে পদক প্রদান করেন। চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও ও খাগড়াছড়িতে নবনির্মিত তিনটি ৫০ শয্যার বর্ডার গার্ড হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং সীমান্ত ব্যাংকের লোগো উন্মোচন করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান সীমান্ত ব্যাংকের ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ বিজিবি মহাপরিচালকের কাছে হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের ট্রিক ড্রিল ও ডগ ড্রিল প্রদর্শনী উপভোগ করেন। এরপর বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে দরবারে তাদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি তা বিবেচনারও আশ্বাস দেন।

দরবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ঘটে যাওয়া বিদ্রোহের ঘটনাকে বাহিনীর ২০০ বছরের ইতিহাসে একটি ‘কালো অধ্যায়’ আখ্যায়িত করে বলেন, সে সময় সরকার গঠনের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছিল। সেদিনের ঘটনায় যারা শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সম্মিলিত সহযোগিতায় সেদিনের সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলাম। বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে এই বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে এবং বাহিনী কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। আপনাদের কঠোর পরিশ্রমে এই বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং একটি গতিশীল ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের আত্মঘাতী সংঘাতের পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সদা-সতর্ক থাকবেন, ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের আত্মঘাতী সংঘাত যেন সৃষ্টি না হয়। প্রধানমন্ত্রী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, এই বাহিনী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে  তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআর-এর বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সারা দেশে প্রচার করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসযোগে প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী এবং আরও ৩ সদস্যকে পাকহানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, এ বাহিনীর দুজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফসহ ৮ জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন। এ বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য শাহাদাতবরণ করেন। তিনি তাদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিজিবিকে একটি দক্ষ, চৌকস, কৌশলী ও তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজিবি আগের চেয়ে অনেক বেশি সফলতা দেখিয়েছে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ড এবং বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে এই বাহিনী আগের চেয়ে অনেক বেশি সফল ভূমিকা পালন করছে। বিজিবির কঠোর অবস্থানের ফলে সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালের সংকট কাটিয়ে ওঠার পর ২২ হাজারেরও বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবির নিজস্ব এয়ার উইং সৃজনের কাজ পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে। বিজিবিতে এ বছরই প্রথমবারের মতো ১০০ নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর