সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে হবে বিএসএফকে

সীমান্ত সম্মেলনের কার্যবিবরণী

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভারত সীমান্তে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা করা হলে লাশ হস্তান্তরের সময় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চেয়েছে বাংলাদেশ। ভারত বাংলাদেশের দাবি মেনে নিয়ে বলেছে, এ ধরনের রিপোর্টের জন্য লাশ হস্তান্তরের আগে বাংলাদেশকে লিখিত ফরমায়েশ দিতে হবে।

গত ২৮ থেকে ৩০ নভেম্বর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ-এ এই যৌথ সীমান্ত সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনের এই সম্মেলনে সীমান্তে হত্যা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মাদক পাচার ও চোরাকারবারি প্রতিরোধ, সীমান্ত হাট, মানব ও নকল মুদ্রা পাচার, দুই দেশের রেল যোগাযোগ, সীমান্ত নদী তীর ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন শ্রীমঙ্গলের ডেপুটি কমিশনার কামরুল হাসান এবং ভারতের আসাম প্রদেশের কাছার জেলার ডেপুটি কমিশনার এস বিশ্বনাথন। এ ছাড়া উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য ছাড়াও সীমান্তবর্তী জেলার ব্যবসায়ীরা ওই বৈঠকে অংশ নেন। গত ৩ ডিসেম্বর বৈঠকের কার্যবিবরণী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের লাশ হস্তান্তর বিষয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বিজিবি ৫২-এর অ্যাকটিং কমান্ডিং অফিসার বলেন, যখন বাংলাদেশি নাগরিকের লাশ হস্তান্তর করা হয়, প্রায় ক্ষেত্রেই তার সঙ্গে আইনি কাগজপত্র পাওয়া যায় না। বিশেষ করে লাশের সঙ্গে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়ায় এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এর জবাবে আসামের করিমগঞ্জের এসপি বলেন, বাংলাদেশ লাশ নেওয়ার আগে লিখিতভাবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দাবি করলে তারা তা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারেন। এ ছাড়া অপরাধী ও বন্দীবিনিময় সংক্রান্ত আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ভারতে আটককৃতদের সম্পর্কে যেসব তথ্য বা নাম ঠিকানা দেওয়া হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। ফলে ওইসব আটককৃতদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মৌলভীবাজারের ডেপুটি কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, ভারত সীমান্তে কোনো বাংলাদেশি মারা গেলে ডেথ রিপোর্টের পাশাপাশি আমরা পোস্টমর্টেম রিপোর্টও দাবি করেছি। কারণ, দুই দেশের বিচারিক ব্যবস্থা প্রায় একইরকম। যে কোনো ধরনের আইনি কার্যক্রম নিতে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দরকার। এ ছাড়া সীমান্ত দিয়ে লাশ হস্তান্তরে অন্তত দুই-তিন দিন সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব বলে আমরা জানিয়েছি। বাংলাদেশের দাবির বিষয়ে ভারত সম্মতি জানিয়েছে উল্লেখ করে কামরুল হাসান জানান, তারা বলেছে, এ ব্যাপারে লাশ হস্তান্তরের আগে বাংলাদেশকে লিখিত দাবি জানাতে হবে। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তির বিষয়টি যদি ভারতের আদালতে বিচারাধীন থাকে তবে তারা আদালতের সম্মতি সাপেক্ষে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে পারবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের দিক থেকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেলে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ধরন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। যাতে বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা সম্ভব হবে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে এ ধরনের হত্যা পরবর্তী আইনি কার্যক্রম গ্রহণও সম্ভব হয় না। বিশেষজ্ঞরা ফেলানী হত্যার উদাহরণ দিয়ে আরও জানান, ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারতের মানবাধিকার সংস্থাগুলো উচ্চকণ্ঠ হওয়ার কারণে অভিযুক্ত বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ জানানো সম্ভব হয়েছিল। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, হত্যা যে দেশের ভূমিতেই ঘটুক না কেন তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সে দেশের প্রশাসনকেই দিতে হবে। ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার যে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে এটি বাংলাদেশের আইনি অধিকার। এ ধরনের রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রাষ্ট্রের কাছে হত্যার ব্যাপারে নালিশ করতে পারে। আর বিচারের বিষয়টি নিশ্চিত হলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের পরিমাণও কমে যাবে। আসক-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মোট ২৭ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ সদস্যরা। ২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ জন বাংলাদেশিকে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জনকে।

সর্বশেষ খবর