মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

‘মৃত’ রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করতেই সুস্থ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিকিৎসকরা বলেছিলেন লাইফ সাপোর্ট খুললেই রোগী মারা যাবেন। যদি আইসিইউ থেকে নিয়ে যেতে চান তবে তার মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী হবে না, এই মর্মে রিস্ক বন্ডে স্বাক্ষর করতে হবে। চিকিৎসকের এমন কথা শুনে হাসপাতালে কান্নার রোল ওঠে। গ্রামের বাড়িতে নিশ্চিত মৃত্যুর খবর জানালে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁড়া হয় কবরও। কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যু মেনে নিয়ে হাসপাতালের সব বিল পরিশোধ করে লাইফ সাপোর্ট খুলে লিফটে উঠানোর সময় চোখ খুলে তাকান তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মকবুল খান। কথাগুলো বলছিলেন ‘পাগল মন’ খ্যাত সংগীতশিল্পী দিলরুবা খানের মেয়ে শিমুল খান। আর এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর মালিবাগের বেসরকারি সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, যদিও হাসপাতাল আমার অধীনে নয়, তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওই রোগী গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আসার পর তাকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে অনেকটা সুস্থ হয়েই তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তার বিল থেকে চার হাজার টাকা ডিসকাউন্টও দেওয়া হয়েছে। শিমুল খান বলেন, লাইফ সাপোর্ট খোলার পরই দেখি বাবা চোখ খুলে তাকিয়েছেন। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। দ্রুত ওই হাসপাতাল থেকে তাকে হলিফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাই। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার পর গতকাল বিকাল ৩টায় বাবাকে সাধারণ শয্যায় নিয়ে আসা হয়েছে। শিমুল খান বলেন, বাবা নাটোরে থাকেন। গত ২ ডিসেম্বর তিনি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত (ব্রেইন স্ট্রোক) কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই রাত পৌনে ১০টায় বাবাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা বলেন, বাবাকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে, নইলে বাঁচবেন না। এমন কথা শুনে আমি রাজি হই। ডা. এম এ মামুন রোগীর দেখভাল করছিলেন। শিমুল খান জানান, তার বাবাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার আগে বলা হয় প্রতিদিন খরচ হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা। তিনি ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। দু-তিন ঘণ্টা পর বাবার কাছে গিয়ে দেখি তার শরীরে অনেক যন্ত্র লাগানো আছে। পরে মা (দিলরুবা খান) আমাকে বলেন, লাইফ সাপোর্টে রাখা মানেই তো মারা গেছে। তাহলে আর রেখ না ওখানে। পরদিন পৌনে ১২টায় আমাদের বলা হয় লাইফ সাপোর্ট খুললেই মারা যাবেন বাবা। তখন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা দাবি করেন, যে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসছেন উনাকে, সে অ্যাম্বুলেন্সে লাইফ সাপোর্ট খুলবেন। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেট দিতেও রাজি হননি তারা। এরপর ৫৭ হাজার ৩২৭ টাকা বিল পরিশোধ করি। এরপর চিকিৎসকরা বাবার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন। শিমুল খান বলেন, হলি ফ্যামিলির চিকিৎসকরা তাকে জানান, সম্প্রতি স্ট্রোক করায় তার (মকবুল খান) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি নিউমোনিয়ায়ও আক্রান্ত। মকবুল খান নাটোর থানাপাড়ায় থাকেন। তিনি উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত। এ মাসের প্রথম দিকে তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে পারিবারিক সিদ্ধান্তে তাকে ঢাকার একটি কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আইসিইউ’র ৭ নম্বর বেডে ভর্তি করে চিকিৎসকরা জানান, লাইফ সাপোর্ট না দিলে রোগী বাঁচবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর