বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

পাখির কলসবাড়ি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

পাখির কলসবাড়ি

একসময় বাংলার প্রকৃতি মাতিয়ে রাখত দোয়েল, কোয়েল, শালিক, ময়না, বাবুইসহ হাজারো পাখির কলতান। কিন্তু এসব চিত্র এখন বিরল। জলবায়ুর পরিবর্তন, অবাধে গাছ নিধন, খাদ্য সংকট, ফসলি জমিতে অতিমাত্রায় সার-কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিলুপ্তির পথে নানা জাতের পাখি। পাখির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং গ্রামবাংলার হারানো ঐতিহ্য  ফিরিয়ে আনতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী গ্রামের পাখিপ্রেমিক দুই যুবক মামুন ও ইমন। পাখির প্রতি তাদের রয়েছে গভীর ভালোবাসা। আর এ ভালোবাসা থেকেই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে পাখির প্রজনন রক্ষায় আগনুকালী গ্রামে গড়ে তুলেছেন পাখির অভয়াশ্রম। গাছে গাছে মাটির কলস বেঁধে দিয়ে পাখিদের কলসবাড়ি গড়ে দিচ্ছেন এ দুই যুবক। গত এক বছরে ৫ শতাধিক গাছে মাটির কলস বেঁধে দিয়েছেন তারা। কলসিতে পাখিরা আশ্রয় নিয়েছে। প্রজনন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। প্রতি ভোরে পাখির কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা জেগে ওঠে। সরেজমিনে আগনুকালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে, জমির পাশে, বিভিন্ন বাসাবাড়ির গাছের মগডালে শোভা পাচ্ছে মাটির কলস। শুধু কলসই নয়, চড়ুই পাখির জন্য ঘরের সঙ্গে লাগানো হয়েছে বাঁশের চোঙ্গা। চোঙ্গা কলসগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে চড়ুই পাখিসহ নানা প্রজাতির পাখি। উদ্যোক্তা মামুন বিশ্বাস বলেন, পাখি প্রকৃতির সম্পদ। ছোটবেলায় যখন খেত-খামারে কাজ করতাম তখন নানা ধরনের পাখি চোখে পড়ত। ফসল বিনষ্টকারী বিভিন্ন পোকা-মাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করত। কিন্তু ইদানীং সে পাখিগুলো দেখা যায় না। এ কথা ভেবেই পাখির অভয়াশ্রম গড়ার চিন্তা করি। প্রথমে বন্ধু ইমনের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলে সে উৎসাহ জোগায়। পরে ইমনকে সঙ্গে নিয়ে গত মার্চে গাছে কলস বেঁধে দেওয়ার কাজ শুরু করি। ইতিমধ্যে পাখি সংরক্ষণ, প্রজনন ও নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘দি বার্ড সেফটি হাউস’ নামে স্বেচ্ছাশ্রমভিত্তিক একটি সংগঠনও গড়ে তোলা হয়েছে। মামুন বাদেও ইমন শাহীন, সুজন, নবী ও আজিজুল নামে চারজন সদস্য রয়েছেন। এ কাজে এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সম্পূর্ণ টাকাই তার বাবা মাহবুবুল আলম ও ভাই মুক্তার হোসেন জোগান দিয়েছেন বলে মামুন বিশ্বাস জানান। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন, রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেকেই পাখির কলসবাড়ি দেখতে এসেছিলেন। মামুন জানান, শুধু আগনুকালী গ্রাম নয়, ইতিমধ্যে পাশের লিছিমপুর, সাতবাড়িয়া, ভেন্নাগাছি, লক্ষ্মীপুরসহ ১০টি গ্রামে কলস বাঁধার কাজ শুরু হয়েছে। এ গ্রামগুলোতেও পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়াও দি বার্ড সেফটি হাউসের উদ্যোগে প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আহম্মেদ জানান, পাখির জন্য অভয়াশ্রম সৃষ্টির ব্যক্তিগত এ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। প্রশাসন থেকেও তাদের সহায়তা করা হবে। রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, ব্যক্তিগত এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। তার কার্যক্রম এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। তারা সরকারিভাবে যাতে অনুদান পায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর