বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চা ব্যবসা রমরমা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

চা ব্যবসা রমরমা

চা বিক্রেতারা এখন দিন-রাত তুমুল ব্যস্ত। বিশ্রামের সময় নেই তাদের। শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মোড়ে মোড়ে ফুটপাথের এ দোকানগুলোয় প্রার্থী থেকে শুরু করে ভোটার, কর্মীরা দিন-রাত আড্ডা দিচ্ছেন। কনকনে শীতে ভোটাভুটির এ আড্ডায় অন্তত এক কাপ চা না হলে তো জমে না। তাই এসব দোকানে বেড়ে গেছে বিক্রি। নির্বাচনের আগে রাত ৯টাতেই ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ত এসব দোকান। আর এখন নির্বাচনী হৈচৈয়ে চা বিক্রি করতে করতেই রাত শেষ হয়ে যায়। এই হলো পঞ্চগড় সদর পৌর নির্বাচনে চা বিক্রেতাদের মহাব্যবস্থার চিত্র। শুধু চা বিক্রেতাই নয়, একইভাবে পঞ্চগড়ে বাদামওয়ালা, ফুচকাওয়ালা, বারো ভাজার দোকান, চিতই পিঠা, ভাপা পিঠার ব্যবসায়ীরাও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। ফুটপাথের এ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এখন পোয়াবারো। মোড়ের এ দোকানগুলোয় চা খেতে খেতেই আড্ডা জমছে ভোটার, কর্মী আর সমর্থকদের। এ জন্য সব খবরই পাওয়া যায় তাদের কাছে। কোন প্রার্থী কোন দিকে প্রচারণা করছেন, ভোটের মাঠে কে কী বলছেন, কোন পরিবারের ভোটটি কোন দিকে যাবে— এদের কাছেই জেনে নেন আরেক প্রার্থীর কর্মীরা। অনেকে এসব খবর দিয়ে ভালো বকশিশও পাচ্ছেন।

ডোকেরোপাড়া মোড়ের রফিকুল ইসলাম এখন প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার কাপ চা বিক্রি করছেন। কলেজ মোড়ের মইনুল দুই থেকে তিন হাজার কাপ। তারা জানান, ‘আগে বিক্রি হতো ৫০০ কাপ। এখন তিন গুণ আয় বেড়েছে। কারণ এখন সারা দিন সারা রাত দোকান করি।’ শহরের জালাশী মোড়ে বারো ভাজার দোকান নিয়ে এসেছেন মঙ্গলু মিঞা। সয়াবিন তেলে পিয়াজ, মরিচ, আদা, রসুনের ভুনার সঙ্গে চানাচুর, বুট, মুড়ি আর মসলা মিশিয়ে বারো ভাজা বিক্রি করছেন তিনি। বাড়িতে বউ, জামাই, মেয়ে আর এক নাতি। জামাই রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও এখন ভোটের সময় আরেকটি বারো ভাজার দোকান করছেন। মঙ্গলু বলেন, ‘জামাইকে আরেকটি বারো ভাজার দোকান করে দিয়েছি। ভোটের সময় কেনাবেচা বেশি। প্রতিদিন ১২০০ থেকে দেড় হাজার। খরচ ৫০০ থেকে ৭০০।’ ব্যবসা কেমন হচ্ছে— জিজ্ঞাসা করলে আরেক বারো ভাজা বিক্রেতা আবদুর রহিম হাসতে হাসতে জানালেন, ‘ভোটের সময় বিক্রি বেড়েছে।’ জালাশী মোড়ে পিঠার দোকান দিয়েছেন শরিফন বেগম। ইটের ওপর বসে মাটির দুটি চুলার একটিতে চিতই আরেকটিতে ভাপা পিঠা বানাচ্ছেন তিনি। একা একা সামলাতে না পেরে বউমার সাহায্য নিচ্ছেন। পিঠা তৈরির চালের গুঁড়া কুটে নিচ্ছেন বউমার কাছে। অবশ্য এর বাবদ বউমাকে প্রতিদিন ১০০ টাকা দিচ্ছেন তিনি। গরম গরম পিঠার সঙ্গে ক্রেতাদের তিনি দেন বিনামূল্যে ধনে ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, গুড় আর শর্ষে ভর্তা। ক্রেতাদের যার যেটা ইচ্ছা নিয়ে খাচ্ছেন আর ভোটের গল্প চলছেই। দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ৬ হাতের এ দোকানটির চারপাশেই প্রায় ১৫-১৬ জন পিঠার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। পিঠা দিয়ে শেষ করতে পারছেন না তিনি। কিন্তু ক্রেতাদের অপেক্ষায় কোনো বিরক্তি নেই। কারণ ভোটের আলাপ চলছে। শরিফন বেগম বলেন, ‘এলা ব্যবসা ভালো হচে। কিন্তু মুই পিঠা তৈরির গুঁড়া কুটিবার সময় পাও না। একটা হাজিরা নিছ, ভালয় আছু বাহে। ভোট শেষ হইলে আবার কমে যাবে ব্যবসা।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর