রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা-২০১৫ আইন

সাতজনের ফাঁসি, শুনানির অপেক্ষায় ১০ আপিল

আহমেদ আল আমীন

সাতজনের ফাঁসি, শুনানির অপেক্ষায় ১০ আপিল

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে চলতি বছর নয়টি মামলায় সাতজনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এর মধ্যে চূড়ান্ত বিচার শেষে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এই সময়ে তিন মামলায় চারজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষিত হয়েছে। আপিল বিভাগে এখন একটি মামলা রায়ের অপেক্ষায়। একই আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আরও ১০টি আপিল। এ ছাড়া পাঁচ মামলায় ২৭ জনের বিচার চলছে ট্রাইব্যুনালে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুট ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আসামিদের বিচার হয়। পেছন ফিরে তাকিয়ে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

আপিল বিভাগের রায়ের পর নভেম্বরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর আগে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ১১ এপ্রিল। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় এ তিনটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এ বছরে। বছরজুড়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও তা আরও ঘনীভূত হয় বছরের শেষ দিকে। এই আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরী ছাড়া অন্য দুজন ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা। এ ছাড়া বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির আদেশ হয়েছে আরও চারজনের। এদের মধ্যে জামায়াত নেতা আবদুস সুবহান, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক ও বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার কারাগারে। কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মোহাম্মদ হাছান আলী পলাতক। আপিল বিভাগে এখন মতিউর রহমান নিজামীর মামলা রায়ের অপেক্ষায়। জামায়াত আমির নিজামীর বিরুদ্ধে এ মামলায় ৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া এই আদালতে এখন আবদুস সুবহান, এ টি এম আজহারুল ইসলাম, মীর কাসেম আলী, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, মোবারক হোসেন, আবদুল জব্বার, মাহিদুর রহমান, ফোরকান মল্লিক, খান মোহাম্মদ আকরাম হোসেন ও সিরাজ মাস্টারের আপিলও বিচারাধীন। এর মধ্যে সিরাজ ও ফোরকানের মামলায় জেল আপিল হয়েছে। জব্বারের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার। আর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল নিষ্পন্ন হলেও এ মামলার রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি। আপিল বিভাগে আসা আসামিদের মধ্যে সাঈদী, আবদুস সুবহান, আজহার, মীর কাসেম জামায়াতে ইসলামীর নেতা। কায়সার ছিলেন এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী। আবদুল জব্বার ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য। মোবারক স্থানীয় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা। আপিল বিভাগে নিষ্পন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ক্রমানুসারে একটির শুনানি শেষে পরবর্তী মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। এ হিসেবে নিজামীর পরে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের আপিলের শুনানি হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক সংগঠন আলবদর বাহিনীর প্রধান, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুট ও দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ এ দণ্ড দেওয়া হয় তাকে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১৬টির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয় আটটি অভিযোগ। প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি আটটি অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। চারদলীয় জোট সরকারে প্রথমে কৃষি ও পরে শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নিজামী ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিলেন নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আপিল করেন তিনি। আপিলে নিজামীর খালাস চাওয়া হয়। নিজামী গ্রেফতার হন ২০১০ সালের ২৯ জুন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে আটক দেখানো হয়। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি সে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ওই বছরের ২৮ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগে নিজামীর বিচার শুরু হয়।

ট্রাইব্যুনালে এখন পাঁচটি মামলায় ২৭ জনের বিচার চলছে। এর মধ্যে যশোরের একটি মামলায়ই আসামির সংখ্যা সর্বোচ্চ নয়জন। নেত্রকোনার একটি মামলায় সর্বনিম্ন দুজনের বিচার চলছে। এ মামলাটির কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে নেত্রকোনার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে মামলা। এ মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ৪ জানুয়ারি আসামিপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন— মো. বিল্লাল হোসেন, মো. ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, মো. আবদুল আজিম সরদার, মো. আজিজ সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম, মো. লুত্ফর মোড়ল ও মো. আবদুল খালেক মোড়ল। এদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন ও মো. লুত্ফর মোড়ল। বাকিরা পলাতক। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ২৬ অক্টোবর একটি মামলায় জামালপুরের আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য দিয়ে ওই মামলার আসামিদের বিচার শুরু হয়। মামলায় আট আসামি হলেন— শামসুল হক, এস এম ইউসুফ আলী, মো. আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ, মো. আবদুল মান্নান, মো. আবদুল বারি, মো. হারুন ও মো. আবুল কাসেম। এদের মধ্যে শামসুল হক ও এস এম ইউসুফ আলী আটক। অন্যরা পলাতক। এর আগে ১২ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের পাঁচজনের বিচার শুরু হয়। এ মামলায় বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠন করেন। মামলার আসামিরা হলেন— শামসুদ্দিন আহমেদ, মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। এদের মধ্যে শামসুদ্দিন গ্রেফতার হয়েছেন। অন্যরা পলাতক। ২৯ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের দুই সহোদর ও তাদের এক চাচাতো ভাইয়ের বিচার শুরু হয়। এ মামলার তিন আসামি হলেন বানিয়াচং উপজেলার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আবদুর রাজ্জাক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর