সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বঞ্চনায় বেসামাল পৌরসভা

জুলকার নাইন ও গোলাম রাব্বানী

বঞ্চনায় বেসামাল পৌরসভা

সারা দেশের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে চলছে ডামাডোল। প্রার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন পৌরবাসীর কাছে। কিন্তু পৌরসভাগুলো তাদের নাগরিকদের যথাযথ সেবা দিতে পারছে না। প্রকৃত অর্থে বেশির ভাগ পৌরসভার অবস্থাই বেহাল। ধারণ করেছে বিবর্ণ চেহারা। কোথাও কোথাও ড্রেন ও খাল দখল হয়েছে, দখল না হওয়াগুলো আবর্জনায় ভর্তি। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, নেই নৈশবাতি। ডাস্টবিন না থাকায় খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। শিশুপার্ক বা জনগণের বিনোদনের ব্যবস্থা আছে হাতেগোনা কয়েকটি পৌরসভায়। ব্যবহারযোগ্য শৌচাগারও নেই বেশির ভাগ স্থানে। পৌরবাসীর সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা অনেক পৌরসভার নেই নিজস্ব ভবন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুসারে ঢাকার অতি কাছে ধামরাই পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় পৌর এলাকা। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশের প্রথম শ্রেণির মানিকগঞ্জ পৌরসভার একমাত্র সড়ক শহীদ সরণি অল্প বৃষ্টিতেই যায় তলিয়ে। বেশির ভাগ স্থানে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। বিনোদনের ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেই। এমন কি শিশুদের জন্য একটি শিশুপার্কও নেই। একটিও পাবলিক টয়লেট না থাকায় আগত নারীসহ অন্যরা পড়েন মহাবিপাকে। চলাচলের জন্য ফুটপাথ নেই, যেটুকু আছে তাও দখল করে নিয়েছে হকাররা।

জামালপুর জেলার সদর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও ইসলামপুর পৌরসভা রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পানি সরবরাহ, সড়কবাতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সদরের মূল সমস্যা ময়লা-আবর্জনা ও তীব্র যানজট। স্বল্প বৃষ্টিতেই দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ীর জলাবদ্ধতা রূপ নেয় বন্যায়। সড়িষাবাড়ী পৌরসভার সরবরাহ করা খাওয়ার পানি কাদা ও ময়লাযুক্ত। ইসলামপুর ও মেলান্দহ পৌরসভায় সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পরই ডুবে থাকে অন্ধকারে। মাদারগঞ্জে নেই কসাইখানা, শৌচাগার ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা।

নব্বইয়ের দশকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও মাদারীপুর পৌরসভায় নেই উন্নয়নের ছোঁয়া। নেই পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা, খেলার মাঠ ও শিশুপার্ক। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য নেই কোনো অডিটরিয়াম। খাল-পুকুরগুলো অবৈধ দখলদারের হাতে। নেই পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা স্থানে। শিবচর পৌরসভায় কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও কালকিনি পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তাঘাট খানখন্দে ভরা। সুপেয় পানির অভাব রয়েছে কালকিনি পৌরসভায়, শিশুপার্ক কিংবা বিনোদন কেন্দ্রের কথা চিন্তাই করা যায় না এই পৌরসভায়। কিন্তু বেড়েছে হোল্ডিং ট্যাক্স। ১৬২ বছরের পুরনো শেরপুর পৌরসভা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ড্রেনের পানি নিষ্কাশন সমস্যায় বেশ কিছু এলাকা বর্ষার সময় ডুবে থাকে। অযত্ন-অবহেলা আর অর্থ সংকটের কারণে ভরাট হওয়ার পথে খালগুলো। বেহাল পৌর গোরস্থান। নকলা পৌরসভা দেখে চেনার উপায় নেই এটা পৌরসভা না ইউনিয়ন পরিষদ। নেই বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। রাস্তায় নেই বাতি। পৌর শহরের কয়েকটি এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। নালিতাবাড়ী পৌরসভা চলছে জনবল সংকট নিয়ে। নেই পৌর ভবন। শ্রীবরদী পৌরসভায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মূল শহরের বাইরে সব রাস্তাই কাঁচা। অব্যবস্থাপনা ও সমস্যায় জর্জরিত সাতক্ষীরা পৌরসভায় জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানি, রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল। নেই ডাস্টবিন। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও সড়কবাতি না থাকায় পৌর এলাকাজুড়ে  ভুতুড়ে পরিবেশ। বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিয়মিত ঘটনা। বান্দরবানের লামা পৌরসভায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। রয়েছে জলাবদ্ধতা ও সুপেয় পানির সংকট, লাইটিং ব্যবস্থা অপ্রতুল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংকট, বিনোদন সুব্যবস্থার অভাব, পৌর এলাকায় থিয়েটার ও পর্যটন নেই, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান নিম্নমানের, পৌর এলাকার মাতামুহুরী নদীর নাব্য না থাকায় দেখা দেয় বন্যা, অধিকাংশ রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। কিশোরগঞ্জের বেশির ভাগ পৌরসভায় রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, পয়ঃনিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা, গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা প্রকট। কিশোরগঞ্জ, হোসেনপুর, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর ও ভৈরব— এসব পৌরসভার বেশ কটিতেই রয়েছে জলাবদ্ধতা, সরু ও ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যা। এ ছাড়া করিমগঞ্জ, কটিয়াদী, কুলিয়ারচরসহ কয়েকটি পৌরসভার বেশ কিছু এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব ছাড়া আর কোনো পৌরসভায় এখনো গ্যাস সংযোগ লাগেনি। সব পৌরসভায়ই রয়েছে ময়লা-আবর্জনার সমস্যা। পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে দিনের পর দিন ময়লা জমে দুর্গন্ধ ছড়ালেও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় না। বছরের পর বছর এসব সমস্যা লেগে থাকলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। ফলে দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না পৌরবাসীর। বেহাল অবস্থা ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি পৌরসভার। বড় সমস্যা হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পানি ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ। এ পৌরসভাগুলোতে একটু বৃষ্টিতে হাঁটু পানি জমে যায়। ড্রেন দিয়েও পানি নিষ্কাশন হয় না। শহরের মহল্লাগুলোতে যে আবাসিক বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে বেশির ভাগই অপরিকল্পিত। এর মধ্যে মুন্সিরহাট পৌরসভায় ছয় মাস ধরে পানি পাচ্ছে না পৌরবাসী। কিন্তু প্রতি মাসে পানির বিল দিতে হয়। পীরগঞ্জ পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া রানীশংকৈল পৌরসভায় জন্ম নিবন্ধন ও বিভিন্ন সনদ দেওয়া প্রধান কাজ। বগুড়ার ৯টি পৌরসভায় সমস্যার শেষ নেই। বড় সমস্যা পৌর এলাকায় যানজট, ফুটপাথ দখল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, অপরিচ্ছন্নতা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ, শহরে রাস্তার বড় অংশ গেছে ভ্রাম্যমাণদের দখলে।

এসব অনিয়ম দিনের পর দিন সচল থাকলেও কোনো কাজের কাজ হয়নি। শুধু শুধু ভোগান্তির শিকার হয়েছে সাধারণ পৌরবাসী। কুমিল্লার ছয়টি পৌরসভার সব কটিতে ভোটাররা সড়কের বেহাল দশার কথা জানিয়েছেন। প্রার্থীরাও জয়ী হলে সড়ক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। দাউদকান্দিতে গ্যাস, ডাস্টবিন ও পানি সংকট রয়েছে। বরুড়ায় গ্যাস নেই অধিকাংশ এলাকায়। লাকসামের ৮০ ভাগ রাস্তা ভাঙা। চৌদ্দগ্রামে গ্যাস ও ডাস্টবিন সংকট রয়েছে। চান্দিনায় ৬০ ভাগ সড়ক ভাঙা। হোমনায় ড্রেনেজ ও সড়কবাতির সমস্যা রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর