সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শেষ হলো রিহ্যাব মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবারের আবাসন মেলায় ২২ হাজারের বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। বিগত সময়ের তুলনায় এবারের মেলায় ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রি বেড়েছে। দর্শনার্থীর চেয়ে ক্রেতার ভিড় বেশি হওয়াতে খুশি বিক্রেতারা। তারা বলছেন, আবাসন খাত দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্লট ও ফ্ল্যাটের দাম কম হওয়াতে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি বলে মনে করছেন তারা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ২৩ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ৫ দিনব্যাপী রিহ্যাব আবাসন মেলা-২০১৫ গত রাতে শেষ হয়েছে। মেলার আয়োজক আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। সংগঠনটি জানিয়েছে, এবার মেলায় অংশ নেওয়া দেড় শতাধিক স্টলে ক্রেতাদের জন্য নানা ধরনের অফার ছিল। এর মধ্যে ক্রেতাদের জন্য কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ সুদে ফ্ল্যাট বা প্লটে অর্থ বিনিয়োগ করেছে, যা আগামীতে আবাসনশিল্পে গতি ফেরাতে সহায়তা করবে। রিহ্যাব আরও জানিয়েছে, এবারের মেলা ব্যবসায়ীদের আশাবাদী করে তুলেছে। অন্য বছর ক্রেতার তুলনায় দর্শনার্থী বেশি থাকলেও এবার চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। মেলায় আগত অনেকেই ফ্ল্যাট বা প্লট কেনার জন্য এসেছেন। অনেকেই অঙ্গীকার করে গেছেন, আগামীতে ফ্ল্যাট কিনবেন। আবাসন মেলার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ফ্ল্যাট বিক্রিতে ভালো সাড়া মিলেছে। এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্রেতা বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের অনেকে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছেন। সবদিক দিয়ে এবার আবাসন মেলায় ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে মেলায় আসা ক্রেতাদের অনেকে ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে বেশকিছু ভোগান্তির কথা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোনালিসা ইসলাম বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের কেনার মতো প্লট বা ফ্ল্যাট এই মেলায় নেই বললেই চলে। আবার উচ্চ সুদের ব্যাংক ঋণ দিয়েও সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়। উত্তরা থেকে আসা ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ফ্ল্যাট দেখতে এসেছি। কিনতেও ভয় পাচ্ছি। ফ্ল্যাট কেনার পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা হয়রানি করেন। জানতে চান ফ্ল্যাট কেনার টাকার উৎস কী। তারা উৎস জেনেও হয়রানি করেন। এ থেকে রেহাই চান তিনি। যাত্রাবাড়ী থেকে আসা একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, প্লট বা ফ্ল্যাটের বিক্রি নেই। কিন্তু দাম তো কমছে না। কষ্ট করে কিনতে চাইলেও যে হারে রেজিস্ট্রেশন ব্যয়, তা জোগান দেওয়া মধ্যবিত্তের পক্ষে অসম্ভব। সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, দিনের শুরুতে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম হলেও দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢল নামে মানুষের। মেলায় আসা ক্রেতাদের বেশির ভাগই খুঁজছেন ছোট ফ্ল্যাট। তাদের আগ্রহ ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকার ফ্ল্যাটে। দেখেশুনে অনেকেই স্টলগুলোতে বুকিং দেওয়ার কথা বলছেন। মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (বিক্রয় ও বিপণন) শামিম আহমেদ শিকদার বলেন, ঢাকা-মাওয়া ৩০০ ফুট প্রশস্ত মহাসড়কের পাশে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে নাগরিক জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আমাদের আবাসিক প্রকল্প সাউথ টাউনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। শতভাগ রেডি প্লট পাওয়া যাচ্ছে নগদ, ৩ মাস ও ৬ মাসের কিস্তিতে। স্বদেশ প্রপার্টিস লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেলায় সানভ্যালী বারিধারা আবাসন প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। প্রকল্পটি কুড়িল ফ্লাইওভারের কাছে হওয়াতে উচ্চবিত্তরা বেশি ভিড় করেন।’ আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘রাজউক অনুমোদিত গ্রীণ মডেল টাউন প্রকল্পটি এখনই বাড়ি করার উপযোগী। এখানে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই প্রকল্পটি মতিঝিলের কাছাকাছি।’ এনা প্রপার্টিস লিমিটেডের ম্যানেজার নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘রাজধানীর প্রায় সব অভিজাত এলাকায় আমাদের ফ্ল্যাট প্রকল্প রয়েছে।’ বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের সহকারী কনসালটেন্ট দেওয়ান ফরিদ হোসাইন বলেন, ‘নতুন ৭২টি প্রকল্প নিয়ে এই মেলায় অংশ নিয়েছি। ১ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুট ফ্ল্যাটগুলো ক্রেতাদের দৃষ্টি কেড়েছে।’ বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উচ্চমধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে হওয়াতে ক্রেতাদের সাড়া মিলেছে।’ জাপান গার্ডেন সিটি লিমিটেডের সহকারী ম্যানেজার খোন্দকার তুহিন বলেন, ‘আমাদের ফ্ল্যাট কিনলে ক্রেতাদের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত আবাসন ঋণ দেবে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর