সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাকশিল্প

রুহুল আমিন রাসেল

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাকশিল্প

সিদ্দিকুর রহমান

দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, বিদায়ী ২০১৫ সালের শুরুতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে সহিংস রাজনীতির চপেটাঘাত পড়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাকশিল্প। বছরের শুরুতে তিন মাসের রাজনৈতিক সহিংসতায় অনেক পোশাকশিল্প মালিক পথে বসেছেন। অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। অনেকে সে ক্ষতি কবে পুষিয়ে উঠতে পারবেন— তাও জানি না। তবে আসছে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বিশ্ব অর্থনীতিতে নবদিগন্তের সূচনা করবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, নতুন বছর ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে যেমন অপার সম্ভাবনা এখন দৃশ্যমান, তেমনি আছে শঙ্কাও। অর্থনীতির এই শঙ্কা মোকাবিলায় আমাদের জাতীয় নেতৃত্বের সাহসী পদক্ষেপ চাই। কোনো অশুভ শক্তি যেন দেশের অর্থনীতিতে কালো মেঘের ছায়া না ফেলতে পারে— সে জন্য প্রধানমন্ত্রী, পোশাক শ্রমিক ও মালিকদের সজাগ দৃষ্টি রাখা চাই। দেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানাকে আন্তর্জাতিক মানের দাবি করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের এখন পিছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নেই। কেননা সামনে আমাদের অপার সম্ভাবনা দৃশ্যমান। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২১ সালে রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যেতে ব্যবসায়ী সমাজ নিরলস পরিশ্রম করছে। দেশের পোশাকশিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠান স্টারলিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশের এই শিল্প বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন বাংলাদেশের জানান দিচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পও বিশ্ব রপ্তানি বাণিজ্যে নিজেদের বৈশিষ্ট্য দ্বারা এগিয়ে চলছে। এখানে আমাদের পোশাকশিল্প পরিবারের অন্যতম সদস্য শ্রমিক ভাই-বোনদের অবদান সবার চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, বিশ্বে আমাদের পোশাক পণ্য রপ্তানির নতুন নতুন বাজার চালু হচ্ছে। দেশের পোশাক কারখানাগুলো এখন আন্তর্জাতিক মানের হওয়াতে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ বাড়াচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, জাপানের পর এখন চিলিতেও উদ্যোক্তারা পোশাক রপ্তানি করছেন। এসব দেশের ক্রেতারা পোশাক কেনার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তবে আমরা ভালো করছি বলেই তারা আমাদের পণ্য নিচ্ছেন। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোকে (এসএমই) আরও উন্নত করতে ব্যাংকগুলোর সহজ শর্তে, স্বল্প সুদে ও দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে ঋণ প্রয়োজন। এটা করতে না পারলে পোশাক খাতের এসএমই কারখানাগুলো টিকে থাকতে পারবে না। আর এসএমই না টিকলে বড় বড় পোশাক কারখানাও বিপদে পড়বে। অনেক পোশাক কারখানা শেয়ার বিল্ডিংয়ে আছে। সেগুলোকে স্থানান্তর করতে অনেক টাকা প্রয়োজন। মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়াতে খুব সহজে এবং দ্রুত পোশাকশিল্প পল্লী হবে না। তাই দ্রুত ছোট ছোট কারখানাগুলোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমি গাজীপুর ও সাভারে সরকারের পড়ে থাকা জমিতে কারখানাগুলো স্থানান্তর করার উদ্যোগ চাই। পোশাকশিল্পে নানা আন্তর্জাতিক চাপ আছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ক্রেতারা পোশাক পণ্যের মূল্য না বাড়ালেও আমরা কারখানার সংস্কার কাজ করছি। আবার দুর্বল অবকাঠামো, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও দক্ষ শ্রমিক সংকট তো আছেই। ব্যাংক ঋণের অতিরিক্ত সুদ ও মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য হ্রাস এবং ডলারের বিপরীতে প্রধান প্রধান মুদ্রাগুলোর অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এ অবস্থায় কীভাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে পোশাকশিল্পের সক্ষমতা বাড়ানো যায়, সে জন্যে সরকারের সহায়তা চাই। আমাদের ডলার মূল্য প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাড়ছে।

পোশাকশিল্পের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এতে পোশাক পণ্য রপ্তানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে। কেননা এই চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম বিনাশুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারবে। এখন এই চুক্তিতে বাংলাদেশ কীভাবে যুক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ চাই।

সর্বশেষ খবর