সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের সঙ্গে জাহাজ চলাচল চুক্তি চায় মালদ্বীপ

খসড়া পাঠাতে নৌ মন্ত্রণালয়কে পররাষ্ট্রের তাগিদ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভারতের পর এবার মালদ্বীপ বাংলাদেশের সঙ্গে উপকূলীয় (পণ্য ও যাত্রীবাহী) জাহাজ চলাচল চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ওই দ্বীপ রাষ্ট্রটির আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তির খসড়া পাঠানোর জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন। গত ৮ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও পর্যটন  শিল্পের প্রসারে দুই দেশের মধ্যে জাহাজ যোগাযোগ গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে মালদ্বীপ সরকার। এর আগে গত আগস্টে মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সে অনুযায়ী মালদ্বীপ জাহাজ চলাচল চুক্তির খসড়া চেয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মালদ্বীপের সঙ্গে জাহাজ চলাচল চুক্তি নিয়ে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে গত জুনে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির পর বঙ্গোপসাগরবেষ্টিত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে জাহাজ চলাচল চুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি বৈঠক করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো ছিল— সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রপথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, চুক্তি অনুযায়ী পর্যটন ও যাত্রীবাহী জাহাজগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে, ওইসব জাহাজের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, যাত্রী নীতিমালা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে সমুদ্রপথে চলাচলের জন্য ছাড়পত্র দেবে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে দেশের নৌবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে একটি প্রতিবেদন দেবে বিআইডব্লিউটিএ।

এরপর গত ৬ অক্টোবর মালদ্বীপ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সমুদ্র যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে জাহাজ চলাচল চুক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে উল্লেখ করা হয়, সমুদ্র জয় এবং নীল অর্থনীতির (ব্লু ইকনোমি) সুফল পেতে হলে বাংলাদেশের সাগরবেষ্টিত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন করা দরকার। আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর পরপরই মালদ্বীপসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ‘এশিয়া প্যাসিফিক ওশান ক্রুজ’-এ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে একদিকে যেমন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়বে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ তিন দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গেও সমুদ্র বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের যোগাযোগ সম্পর্ক পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর