মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা-২০১৫ বাণিজ্য

বাংলাদেশের অগ্রগতি এক বিস্ময়

তোফায়েল আহমেদ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের অগ্রগতি এক বিস্ময়

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিএনপি-জামায়াতের টানা ৯৩ দিন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এখন অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এটি বাংলাদেশের ‘বিস্ময়কর এক অগ্রগতি’। এটা ‘মিরাকল’ ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০১৫ সালের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ সময় তিনি রাজনৈতিক ও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা প্রসঙ্গেও কথা বলেন। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী’ সম্পর্কে বিএনপির এক নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, মানুষের পক্ষে এ ধরনের মন্তব্য করা সম্ভব নয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন যে আঙ্গুলে লিখতেন তার সেই আঙ্গুলগুলো কেটে দেওয়া হয়েছিল। চোখের ডাক্তার আলীম চৌধুরী, তার চক্ষু তুলে নেওয়া হয়েছিল। তারপর তাকে হত্যা করা হয়। আর ডা. ফজলে রাব্বির কলজে বের করে নেওয়া হয়েছিল। যেহেতু তিনি হার্টের ডাক্তার ছিলেন। এ সময় তোফায়েল আহমেদের চোখে পানি চলে আসে। কথা বলতে বলতে আবেগে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে...। এ সময় সাক্ষাৎকার দিতে দিতেই বাণিজ্যমন্ত্রী ভোজ্যতেলের দাম কমাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এরপর মন্ত্রী বলেন, তিনি চেষ্টা করেছেন, সারা বছরই যাতে নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে থাকে। তার মতে সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। এমন কি এই বছর রমজান মাসেও জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক ছিল।  বাণিজ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা দূর করতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতাদের নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে এরই মধ্যে তাদের সঙ্গে তিনটি বৈঠক করার কথাও উল্লেখ করেন। অর্থনৈতিক এই অগ্রগতির মধ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি সম্পর্কে বিদেশিদের যে অনুযোগ সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র আছে, সংসদও আছে। নবম সংসদে বেগম খালেদা জিয়া মাত্র ৬ দিন (জাতীয় সংসদ অধিবেশনে) উপস্থিত ছিলেন। এবার বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে রওশন এরশাদ নিয়মিত সংসদে আসছেন। গঠনমূলক আলোচনার পাশাপাশি তিনি সরকারের সমালোচনাও করছেন। তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে ভুল করেছিল, এবার ধানের শীষ নিয়ে পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন খালেদা জিয়া। তিনি শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৫ সালের সেই দিন (৫ জানুয়ারি) থেকে টানা ৯৩ দিন জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি চালিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এটা রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড শুধু ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, তিনি (খালেদা জিয়া) কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে শূন্য হাতে ঘরে ফিরেছেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, অনেকে মনে করেছিল, রপ্তানি কমে যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামবে। আমাদের রপ্তানি কমেনি। এবার আমাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। রেমিট্যান্স বেড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক চালিকা সূচকে আমরা পাকিস্তানের চেয়ে সর্ব ক্ষেত্রে এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছি। মন্ত্রী বলেন, এটা আমার কথা নয়, বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু নিজেই বলে গেছেন, শুধু পাকিস্তান নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে দারিদ্র্য হার ছিল ৪৪ শতাংশ সেটি কমে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এ দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়বেন, তিনি কথা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে, আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলছেন, আমাদের এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আমরা অনেক দেশের কাছে অনুসরণীয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাকা ওবামা কেনিয়া সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির অগ্রগতি বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনুসরণীয়। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, বিশ্বের যে ৫টি দেশে বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। তাদের কাছে ‘বাংলাদেশ ইজ নাথিং বাট অ্যা মিরাকল’।

সর্বশেষ খবর