মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অর্থনীতি হয়ে পড়েছে দলবান্ধব

আমীর খসরু

মাহমুদ আজহার

অর্থনীতি হয়ে পড়েছে দলবান্ধব

দেশের অর্থনীতি এখন ‘ব্যবসাবান্ধব’ নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন হয়ে পড়েছে দলবান্ধব। ব্যবসাকে রাজনীতিকরণ থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করাতে হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর হোটেল সেরিনায় নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী। তার মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নির্বাচিত সরকার। প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা। দেশে যার সবগুলোই আজ অনুপস্থিত। এখন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার নেই। অনির্বাচিত সংসদে আজ আইন প্রণয়ন হচ্ছে। সত্যিকারার্থের মুক্তবাজার অর্থনীতিও কাজ করছে না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজ যারা সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তারা নিজেদেরকে সংকুচিত করে রাখছেন। ব্যবসায়ীদের অনেকেই নীরবে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। যে কারণে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে আছে। কোনো ব্যবসায়ী নিতে সাহস পাচ্ছেন না। দুর্নীতি থেকে অর্জিত একটি বিশাল অংশ এবং সাধারণ ব্যবসায়ীদের টাকার বড় একটি অংশ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। চরম দুর্নীতির কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, সব সেক্টরেই রাজনীতির কারণে সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অসৎ ব্যবসায়ীদের অপতত্পরতা অনেক বেড়ে গেছে। যেখানে সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা নিজেদের সংকুচিত করে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান আরও নিচে নেমে গেছে। দেশের অর্থনীতি এখন ব্যবসাবন্ধব না হয়ে দলবান্ধব হয়ে গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে দেশে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ও ভরসা করতে পারছেন না, সেখানে বিদেশিরা আসবেন কীভাবে। রাজনৈতিক অবস্থা সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় চরমপন্থিদের আগমনও অশনি সংকেত। বাংলাদেশে বিনিয়োগেও এটা বড় বাধা। ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্বৃত্তায়ন ও চরম অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। শেয়ারজারের কেলেঙ্কারির বিচার আজও হয়নি। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির কারণে লুণ্ঠনকারীরা পাড় পেয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন বেড়ে গেছে। প্রাইভেট সেক্টরেও বিনিয়োগ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিক নিরাপত্তার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও অপচয় আর দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। পানি-বিদ্যুৎ ও গ্যাস দুর্লভ হয়ে পড়ছে। যে কারণে আজ আবাসন শিল্পসহ সব খাতেই বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যেখানে সাত বছর আগে আমরা প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপরে রেখে গিয়েছিলাম, সেখানে প্রবৃদ্ধি আজ ৬ ভাগের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছে। যা আজ হওয়ার কথা ছিল ৯ থেকে ১০ শতাংশ। দেশের অর্থনীতি সচলের জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত সরকার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও আইনের শাসন। নির্বাচিত সংসদ ও ব্যবসায়িক নিরাপত্তা। গায়ের জোরে অর্থনীতি সচল হবে না। বিনিয়োগকারীদের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। পেশি শক্তির মাধ্যমে সবকিছু হয় না। এটা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর