মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বেলকুচি হাসপাতালে সিন্ডিকেটের রাজত্ব

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

বেলকুচি হাসপাতালে সিন্ডিকেটের রাজত্ব

২০ ডিসেম্বর। শ্বাসকষ্টজনিত কারণে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন শেরনগর গ্রামের আবদুস সামাদ। ডাক্তার তার নিজস্ব প্যাডে ওষুধ এবং এক্স-রে করার জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। কিন্তু হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন নেই, ওষুধও নেই। বাধ্য হয়ে তাকে ব্যবস্থাপত্রের নির্দেশনা পালন করতে হয় বাইরে টাকা খরচ করে। একই অবস্থায় পা কেটে যাওয়া বেতিল গ্রামের সামিনা খাতুনের। ডায়াবেটিস পরীক্ষা থেকে শুরু করে সব ওষুধ  বাইরে থেকে তাকে কিনতে হয়েছে। জানা গেছে, আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীকেই ডাক্তাররা তাদের নিজস্ব প্যাডে রিপ্রেজেন্টেটিভ ও দালালদের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ-পরীক্ষা লিখে দেন। রোগীদের তাদেরই কমিশনপ্রাপ্ত দোকান থেকে ওষুধ কিনতে ও পরীক্ষা করাতে বাধ্য করছেন। সব মিলিয়ে হাসপাতালকে ঘিরে চিকিৎসক, দালাল ও রিপ্রেজেন্টেটিভরা একটি শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। আর তাদের ফাঁদে পড়ে টাকা গুনতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এক্স-রে মেশিনটি প্রায় ৫ বছর যাবৎ নষ্ট হয়ে আছে। ডায়াবেটিস পরীক্ষার মেডিসিন নেই। নেই দন্ত চিকিৎসক, দন্ত মেশিনের পানি-পরীক্ষার জন্য মেডিসিন সাপ্লাই, গাইনি চিকিৎসক। সামান্য টিউমার কেটে ফেলার যন্ত্রও নেই। প্রয়োজনীয় কোনো ওষুধও নেই। এমনকি হাসপাতালে ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন লেখার কাগজ পর্যন্ত নেই। প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা প্রদানের জন্য নির্মিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি বিশেষজ্ঞ পদ থাকলেও চিকিৎসক নেই। নার্সরাই নরমাল ডেলিভারি করছেন। সামান্য টিউমার অপারেশন বা কেটে-ফেটে গেলে সরাসরি জেলা সদর বা অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের প্রবেশমুখে থাকছে অন্তত ২০ জনের বেশি রিপ্রেজেন্টেটিভ ওঁৎ পেতে আছেন। চিকিৎসকদের রুমের সামনেও রয়েছে দালাল। হাসপাতালের পরিবেশও একেবারে নোংরা। চত্বরে গরু-ছাগল অবাধে বিচরণ করছে। অনেকেই জানান, রাতে হাসপাতাল চত্ব্বর মাদকসেবীরা দখল করে নেয়। হাসপাতালের বাথরুম পরিষ্কার করা হয় না। সেখানে লাইট আছে; কিন্তু জ্বলে না। খাবারের মানও অত্যন্ত খারাপ। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব কারণে রোগীরা এখানে ভর্তি হতে চান না। চিকিৎসাধীন সামিনা বেগম জানান, গরিবের চিকিৎসা নেবার সামর্থ্য নেই। যে কারণে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু দিনে দুটি বড়ি আর ইনজেকশন ছাড়া কিছুই মেলে না। সব ওষুধ আর পরীক্ষা বাইরে থেকে করতে হয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা আবুল কাশেম জানান, ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন, কিন্তু পরীক্ষার মেডিসিন নেই। তাই ফিরে যাচ্ছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু নামেই হাসপাতাল। কোনো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় না।’ এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার কামরুল হাসান জানান, ‘হাসপাতালে লেখার কাগজ না থাকায় ডাক্তাররা নিজস্ব প্যাডে ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। যে ওষুধ সাপ্লাই হয় তা মাসের প্রথম দিকেই শেষ হয়ে যায়। যেহেতু এক্স-রে মেশিন আর ডায়াবেটিস পরীক্ষার মেডিসিন নেই— তাই সেগুলো বাইরে করতে হচ্ছে। এক্স-রে মেশিনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার লিখেও কোনো ফল হয়নি। দালাল ও রিপ্রেজেন্টেটিভদের বিষয়ে তিনি বলেন, সপ্তাহে দুদিন রিপ্রেজেন্টেটিভরা হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের আশপাশের ডায়াগোনস্টিক সেন্টারের লোকজনই দালাল হিসেবে কাজ করে। কিন্তু তারা স্থানীয় হওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’

সর্বশেষ খবর