চলনবিলের চাতালে তৈরি দেশি প্রজাতির মাছের স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকির কদর বাড়ছে সারা দেশে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় রংপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এমনকি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাজারেও এ অঞ্চলের শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তৈরির সময় লবণ ছাড়া অন্য কোনো মেডিসিন মেশানো হয় না; ফলে স্বাস্থ্যসম্মত এ শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিপুল সম্ভাবনাময় এ শিল্পের জন্য এখনো সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর এ অঞ্চলে মত্স্যজীবী ও শুঁটকি উৎপাদনকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মত্স্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা চলনবিল অঞ্চলে একটি শুঁটকি সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। মত্স্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ণ বিলের পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে দেশি প্রজাতির মিঠা পানির মাছ টেংরা, পুঁটি, খলিশা, বাতাসি, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শৌল, গুতম, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কইসহ নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। আর এ মাছকে কেন্দ্র করেই চলনবিলে গড়ে উঠেছে শুঁটকির প্রায় ৩ শতাধিক অস্থায়ী চাতাল। এসব চাতাল মূলত বৃষ্টিহীন আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চালু থাকে। মত্স্যজীবী ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে গত ৩৭ বছরেও এ অঞ্চলে মত্স্য রক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ও জলাশয় প্রভাবশালী ও অমত্স্যজীবীদের দখলে চলে গেছে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের ৯ উপজেলার বৃহৎ জলাভূমি অঞ্চল নিয়ে চলনবিল এলাকা গঠিত। ভৌগোলিক কারণেই এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে মত্স্যজীবীদের বসতি গড়ে উঠেছে। তারা সারা বছর এসব এলাকার জলাশয় থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।