বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা-২০১৫ অর্থনীতি

গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট কেটে গেছে

আবুল মাল আবদুল মুহিত

মানিক মুনতাসির

গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট কেটে গেছে

গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা কেটে গেছে। রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো নির্মাণে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রয়েছে। এখন আর রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো আশঙ্কা নেই। তাই দেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা বিনিয়োগ বোর্ড ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অফিসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। ফলে নতুন বছর হবে বিনিয়োগের বছর। ২০১৫ সালটাও অর্থনীতির জন্য ভালোই ছিল বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ সময়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ একটু কম বাড়লেও পাবলিক খাতের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। নতুন নতুন শিল্প স্থাপিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে জাতীয় বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে মোট জিডিপির ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১৪০০ ডলারের কাছাকাছি। এ সময়ে বৈদেশিক সহায়তা দাঁড়িয়েছে জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ। রপ্তানি আয় হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর আমদানি ব্যয় হয়েছে ২০ দশমিক ৯ শতাংশ। এগুলো সবই সামষ্টিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক সহিংসতা হলেও মার্চের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনীতি শান্ত রয়েছে। এ ধরনের সহিংসতার আর কোনো আশঙ্কা নেই। ফলে রাজনৈতিক কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন বছরে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের শিল্প খাতের কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। সামাজিক ও মানব উন্নয়ন খাতে বাংলাদেশ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এ গতি বাড়বে। এডিপি বাস্তবায়নেও গতি আসবে। আগামী বাজেট থেকে মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দ রাখা হবে। বিভিন্ন সময় এসব প্রকল্পের অর্থায়ন সময়মতো জোগান দিতে না পারায় তা বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়ে। আগামী বাজেট থেকে এ সমস্যা সমাধানের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ যেসব মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পৃথক বাজেট দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার হতে পারে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগ বেড়েছে, রাজস্ব আদায় বেড়েছে। তাই সরকারের বাজেটের আকারও বাড়ছে। চলতি বাজেটে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো দেওয়া হয়েছে। এখন সব ক্ষেত্রে কাজের গতি বাড়বে। দুর্নীতি কমে আসবে। কেননা তাদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এখন আর আর্থিক দৈন্যের কারণে কেউ দুর্নীতি করবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ যারা বেতন কাঠামোর বৈষম্যের অভিযোগ এনে আন্দোলন করছেন তাদের এ আন্দোলনকে তিনি আবারও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়েছেন। কেননা এ ধরনের ভালো বেতন কাঠামো আর কখনো কোনো সরকার দিতে পারেনি। ফলে আন্দোলনকারীদের ঘরে ফিরে নিজ কাজে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। চলতি অর্থবছরের জন্য অর্থনীতির বড় অর্জন কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ভালো কাজ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু হয়েছে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য একটা বড় অর্জন। মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন নিম্নমধ্য আয়ের দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে; যা বিশ্বব্যাংক কর্তৃক স্বীকৃত। এ স্বীকৃতিও চলতি বছরই এসেছে, যা বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এ ছাড়া আরও অনেক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আরেকটা বড় অর্জন হচ্ছে ২১ লাখ সরকারি কর্মচারীকে নতুন বেতন কাঠামো দেওয়া। এটা ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর