শিরোনাম
বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মান্দার সরিষা খেতে বাণিজ্যিক মধু চাষ

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

মান্দার সরিষা খেতে বাণিজ্যিক মধু চাষ

মান্দার সরিষা খেতে বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে মধু চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। সরিষা খেতের পাশেই মৌ-চাষিরা ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষ প্রকল্পের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছেন। গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ মধু পার্শ্ববর্তী ভারতসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মান্দা উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। এদিকে কৃষক ও মধু সংগ্রহকারীদের ভাষ্য থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চার মাস সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা যায়। বছরে মূলত মধু সংগ্রহ করা যায় আট মাস। সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য এখন মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষিরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মান্দা উপজেলার ছোটমুল্লুক নীচপাড়ার সরিষা খেতে প্রায় ১০০টি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন বেকার যুবক কামরুজ্জামান শরিফ, মামুনুর রশিদ ও দেলোয়ার হোসেন। তাদের বাড়ি রাজশাহী জেলার মোহনপুর এবং বাগমারা উপজেলায়। দিনাজপুর বিসিক থেকে মৌ-চাষের ওপর তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তারা। বিভিন্ন মৌসুমে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌ-বাক্সে মধু চাষ করে লাভবান হয়েছেন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তারা সরিষা খেতে বাক্স পেতে বসেছেন। প্রতিটি বাক্সে তারা রানী মৌমাছিসহ বিসিক থেকে কিনে নিয়েছেন তিন হাজার টাকা করে। বাক্সগুলো স্থায়ী। তারা জানান, এগুলো দিয়ে সব সময় তারা সবখানে মৌ-চাষ করতে পারবেন। সরিষার ফুল থাকা পর্যন্ত তারা মধু আহরণ করতে পারবেন। নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা থেকে আসা মধু সংগ্রহকারী আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে কৃত্রিমভাবে মধু সংগ্রহ করছেন। সপ্তাহ খানেক হলো নওগাঁর মান্দা উপজেলায় এসেছেন। শ্রীরাম গ্রামের পাশে সরিষা খেতে ১০০টি মধু সংগ্রহের বাক্স পেতেছেন। এখনো মধু সংগ্রহ শুরু করেননি। তার মতে, আবহাওয়া ভালো থাকলে সাত দিনের মধ্যে মধু সংগ্রহের উপযোগী সময় হবে। তখন ১০০টি বাক্স থেকে প্রায় ২০০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যাবে। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকলে ১৫-২০ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলা থেকে আসা মধু সংগ্রহকারী আরিফ হাসান ও এমদাদুল হক জানান, ১০ বছর ধরে তারা দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করছেন। এখন ভারশো গ্রামে ২০ দিন ধরে মধু খামারে ৯৫টি বাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। তারা মধুর দাম সম্পর্কে জানান, সরিষা ফুলের মধুর মণ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, লিচু ফুলের মধু ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। সব থেকে কালাই জিরা ফুলের মধুর দাম বেশি, প্রতি মণের দাম ৭ হাজার টাকা।

মধু চাষিরা সমস্যা সম্পর্কে জানান, ফসলি জমিতে পোকা-মাকড় দমনের জন্য কৃষকরা ইচ্ছেমতো কিটনাশক ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন কিটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিরাও সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলি আবাদি জমিতে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এসব কীটনাশক পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে এতে মৌমাছিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শ্রীরামপুর গ্রামের সেফাতুল্লাহ বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং ফসলের ফুলে বিভিন্ন কিটনাশক প্রয়োগ করায় বড় মৌমাছি কমতে শুরু করেছে। তিনি কৃষকদের অনুরোধ করেছেন— যেন তারা ফুলে কীটনাশক প্রয়োগ না করেন। বালীচ গ্রামের কৃৃষক আলমগীর হোসেন জানান, সরিষা আবাদে ফুল আসার আগে পোকা-মাকড় দমনের জন্য বিভিন্ন কিটনাশক কোম্পানির ওষুধ দিতেই হয়।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলার কয়েক স্থানে প্রায় ৩০০ বাক্স পেতে মৌ-চাষিরা সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন। এসব বাক্স থেকে কেবলমাত্র সরিষার মৌসুমে প্রায় ১২ হাজার কেজি মধু উৎপাদিত হবে। এ থেকে বেকার যুবকরা প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয় করবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সত্যব্রত সাহা বলেন, মধু রপ্তানি হলে অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। এ জন্য আগামীতে জেলায় সরিষা চাষ আরও বৃদ্ধি করা হবে। তিনি কৃষকদের সরিষার ফুলে কীটনাশক প্রয়োগ না করার জন্য অনুরোধ করেন।

সর্বশেষ খবর