বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা -২০১৫ রাজনীতি

চাপে শুরু আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাসে শেষ

রফিকুল ইসলাম রনি

টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের এক বছর পূর্তি সামনে রেখে এ বছরের শুরুতেই বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন, পেট্রলবোমায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা, ট্রেন-লঞ্চসহ সহসধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে চাপের মুখে পড়ে সরকার। তারপরও সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে মার্চের পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে না আসতেই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় গুপ্তহত্যা। ব্লগার, মুক্তমনা লেখক-প্রকাশক ও পুলিশ হত্যা সরকারকে বিব্রত করে। এর মধ্যেও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারকে নতুন করে চাপে ফেলতে গুলশান কূটনৈতিকপাড়ায় এবং রংপুরে হত্যা করা হয় দুই বিদেশিকে। দিনাজপুরে এক বিদেশি ধর্মযাজককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বোমা হামলা চালানো হয় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মসজিদে। কিন্তু কোনো কিছুই টলাতে পারেনি শেখ হাসিনার সরকারকে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে চলতি বছরটি অভূতপূর্ব সাফল্যের বছর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বর্তমান সরকারের জন্য। বিশেষ করে  নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু, দেশি-বিদেশি বাধা উপেক্ষা করে শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, চট্টগ্রাম, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দলীয় মেয়র নির্বাচিত করা, দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির অংশগ্রহণকে সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। সাংগঠনিকভাবেও সাফল্যের বছর ছিল আওয়ামী লীগের জন্য। চলতি বছরেই প্রায় ৫০টি জেলায় সম্মেলন সম্পন্ন করেছে শাসক দলটি। সব মিলিয়ে বছরের শুরুতে রাজনৈতিক চাপে থাকলেও সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ২০১৫ সাল পার করছে শেখ হাসিনার সরকার ও আওয়ামী লীগ। সমালোচকরাও বলছেন, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এই মুহূর্তে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমান সরকারের বিগত এক বছরের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সার্বিকভাবে বছরটি সাফল্যের সঙ্গে পার করেছে সরকার। বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বিশ্ব মন্দা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। মাঝখানে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও সরকার কঠোর হস্তে তা দমন করতে সক্ষম হয়েছে। বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু এবং দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর করা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য চলতি বছরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এ বছর বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অর্জনের বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অনেকগুলো অর্জন আমাদের এনে দিয়েছেন। বাধা সত্ত্বেও দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করেছেন। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি দিয়ে যানবাহনে চোরাগোপ্তা, অগ্নিসংযোগ ও  পেট্রলবোমা হামলা করে ১৪৭ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ট্রেন লাইন উপড়ে, রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাজধানীকে সারা দেশ থেকে সাময়িক বিচ্ছিন্ন করে সরকারকে কিছুটা চাপে ফেলে বিরোধী দল। এ সময় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নিজ বাসা থেকে গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে ঘোষণা দেন তিনি অবরুদ্ধ। সরকারের পতন না ঘটা পর্যন্ত কার্যালয় ছাড়বেন না। ৯২ দিনের মাথায় আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে কার্যালয় থেকে বাসায় ওঠেন তিনি। এতে স্বস্তি ফেরে সরকারে। এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের কারণেই। ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন ছিল সরকারের এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশল। আন্দোলনরত বিএনপি-জামায়াতকে নির্বাচনে নিয়ে আসার কৌশল ছিল এই নির্বাচন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্ত অব্যাহত ছিল। শীর্ষ অপরাধীদের দণ্ড কার্যকর না করতে ছিল নানা হুমকি-ধমকি। কিন্তু এক্ষেত্রে আপসহীন শেখ হাসিনা সবকিছু উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত এ বছর শীর্ষ দুই মানবতাবিরোধী অপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী  ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার অঙ্গীকারও বাস্তবায়নে আরও একধাপ এগিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। গত ১২ ডিসেম্বর বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর মূল সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। এটা ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের বড় ধরনের কূটনৈতিক সফলতা।

সর্বশেষ খবর