বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
‘রোড টু ওয়েস্টমিনিস্টার’-এ টিউলিপ সিদ্দিক

খালার কাছ থেকেই শিখেছি ধৈর্য

বিশেষ প্রতিনিধি

খালার কাছ থেকেই শিখেছি ধৈর্য

বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও ব্রিটিশ সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, আমার খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় দেশে রাজনীতি করতে উত্সাহ দেন। বাংলাদেশের সংসদ ভবনের সৌন্দর্য দেখিয়ে বলেন, দেশি রাজনীতিতে জড়াতে। যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনিস্টারের প্রভাবশালী রাজনীতিক হয়ে ওঠার পথে পাওয়া অভিজ্ঞতা জানাতে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল বিকালে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে ‘লেট’স টক উইথ টিউলিপ সিদ্দিক : ‘রোড টু ওয়েস্টমিনিস্টার’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ। সংলাপ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, খালা দেখা হলেই বলেন, দ্যাখ, আমাদের সংসদ কত সুন্দর! তিনি আমাকে সংসদ দেখিয়েছেন। সবসময়ই বলেন, বাংলাদেশে চলে আয়, এখানেই রাজনীতি কর।

যে কোনো অর্জনের পেছনে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে মন্তব্য করে টিউলিপ বলেন, কোনো কিছু করব বলে ঠিক করলে তা অবশ্যই করি। আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকি।

নারীর অগ্রগতিতে আগ্রহী বলেও নিজের সম্পর্কে বলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সদস্য। সারির পেছনে বসা স্বামীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, বিয়ের দিনটি সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল। এ ছাড়া নির্বাচনের দিনও খুশির ছিল। আর মন খারাপ বা দুঃখের দিন ছিল যেদিন দাদা মারা গেছেন। টিউলিপ জানান, মুসলিম হিসেবে তিনি গর্ব করেন এবং এ পরিচয়ে কেউ অরাজকতা করলে তিনি দুঃখ পান। তিনি বলেন, নানা-নানীকে নিয়ে বই পড়েছি। দেখিনি, অন্যের মুখে শুনেছি। ছোটবেলায় দাদা-দাদির কাছে ছিলাম। আমরা যৌথ পরিবারে ছিলাম। স্বজনরা কাছাকাছি ছিলেন সবাই। আমার মেয়েটি সেটি পাবে না। এ নিয়ে আক্ষেপ করি। টিউলিপ বলেন, আমি চাই ভালো মা হতে। আমার মেয়ে যেন আমাকে সবসময় দেখতে পায়। রাজনীতি উপভোগ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আমার কাজ পছন্দ করি। শীতের মধ্যে রোদের দেখা নেই, এমন সময়ও আমি আমার কাজ পছন্দ করেছি। কারণ, আমি আমার পছন্দের কাজটি বেছে নিয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমার পরিবার বলেছে, যা হতে চাও, হতে পারো। অতীতের স্মৃতি থেকে তিনি বলেন, আমি যখন স্কুলে ছিলাম, শেকসপিয়রের একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। শমী কায়সারের সঙ্গে একটি নাটকে অভিনয় করেছি। আমি সত্যি অতীত জীবনের সবকিছু উপভোগ করি, মনে করি।

নিজের বেশ কয়েকটি ভূমিকার মধ্যে বিদেশে একটি পরিচয়  তৈরি করার বিষয়টি প্রাধান্য দেন টিউলিপ। তিনি জানান, তার কাছে বঙ্গবন্ধুর নাতনি পরিচয়টিও সমান উপভোগ ও গর্বের। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বিষয়টি গর্বের। টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, সবসময় নির্বাচনে জিততে হবে-তা নয়। সবসময় জেতার চিন্তা থাকলে হতাশ হতে হয়। প্রথমবার আমি জিতিনি, কিন্তু ভালো লেগেছে অভিজ্ঞতা। মানুষের দরজায় যাওয়া, সবার সঙ্গে কথা বলা— আমার কাছে মজার ছিল। ব্রিটিশ এই এমপি বলেন, খালার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সবচেয়ে বেশি শিখেছি— ধৈর্য, রাজনীতিতে এটি বেশি প্রয়োজন। মা হওয়ার পর নতুন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি যে দল থেকে এমপি হয়েছি, সে দল থেকে আগে কোনো নারী এমপি হয়নি। নির্বাচনের আগে মা হলেও  কোনো সমস্যা হতো না বলে জানান তিনি। সংলাপে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, তরুণ নেতা, বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ।

তিনি বলেন, যারা ব্রিটেনে জন্ম নেন, সেখানে বড় হন; তারা অনেকেই ভালো বাংলা বলতে পারেন না। ব্রিটিশরাও তাদের ব্রিটিশ মনে করছে না, আবার বাংলা না বলতে পারায় বাংলাদেশিরাও তাদের আপন করছে না। তাই পরিচয় সংকটে  ভোগেন তারা। নিজের একটি পরিচয় তৈরি করতে তারা আইএসে যোগ দিচ্ছেন; যা খুবই দুঃখের।

ওয়েস্টমিনিস্টারের পথে পাওয়া অভিজ্ঞতাগুলো জানাতে বসে টিউলিপ বলেন, জঙ্গিবাদের জন্য ইসলাম দায়ী নয়। আমি মুসলমান হিসেবে গর্ব করি। নির্বাচনের আগে অনেকেই তাকে মুসলিম পরিচয় লুকানোর কথা বলেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

টিউলিপ বলেন, আমাদের ৬৫০ জন এমপি, এর মধ্যে সাদা নয় মাত্র ৪০ জন, আমি তাদের একজন। অনেকেই আমাকে বলেছেন, তোমার টিউলিপ সিদ্দিক নাম দিও না, স্বামীর নাম  থেকে টিউলিপ পার্সি দাও। মুসলমানকে ভোট দেবে না কেউ। কিন্তু আমি তাদের বলেছি, জন্ম থেকে এটি আমার নাম। যারা মুসলমান বলে আমাকে ভোট দিতে চায় না, তাদের ভোট আমি চাই না। মুসলমানকে ভোট দেয় না, এটি সত্য নয়।

সর্বশেষ খবর