বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

লাঞ্ছিত গণমাধ্যম কর্মীরা, আটক ১

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৌর নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গণমাধ্যম কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। শারীরিক লাঞ্ছনা ছাড়াও তাদের অনেকের ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের ভূমিকা ছিল নিছক দর্শকের মতো। কিছু কিছু জায়গায় গণমাধ্যম কর্মীরা হামলাকারীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাল ভোটের দৃশ্য ধারণের চেষ্টা করার অপরাধে কিছু এলাকায় উল্টো গণমাধ্যম কর্মীদেরই আটক করা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে ভীতি ছড়ানোর জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের ঠিক কাছাকাছি স্থানেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এমনকি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়েও বাধার মুখে পড়েন সাংবাদিকরা। যা অতীতে কখনই হয়নি। রাজশাহী : রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভার পিএন উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গভীর রাতে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করার অভিযোগে সমকাল ও এটিএন নিউজের ব্যুরো প্রধান সৌরভ হাবিব, ক্যামেরাম্যান রবিউল ইসলাম খোকন ও সৌরভের ভাগ্নে তারিকুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে। হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক ফারহানা রহমানকে মারধর করা হয়েছে, তার ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ। পুলিশের সাহায্য চেয়ে ফারহানা রহমান চিত্কার করলেও তা পাননি। একই সঙ্গে লাঞ্ছনাকারী ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হলেও পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া যশোর পুলিশ লাইন স্কুলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক নাফিজা দৌলা লাইভ দেওয়ার সময় তার ঠিক পিছনে পায়ের পাশে পরপর চারটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও তার সমর্থকদের হাতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর-এর সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি মাইদুল রাসেল ও দৈনিক সংবাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি লতিফুর রহমান রাজু লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। লাঞ্ছনার শিকার রাসেল জানান, সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আয়ুব বখত জগলুলের সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালায়। তারা তার ক্যামেরা ভাঙচুর করে। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ জানান, সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের গেটে জটলা দেখে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় হয়তো দুই সাংবাদিকের গায়ে একটু লেগেছে। ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীরাও ছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের তথ্য ও চিত্র ধারণের সময় এসএটিভির সাংবাদিক পান্না দত্ত, সময় টিভির অলিউর রহমান ও দৈনিক কালের কণ্ঠের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি আবদুল হামিদ মাহবুব এবং বাংলানিউজের জেলা প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান রাহেল লাঞ্ছনার শিকার হন। দুর্বৃত্তরা এ সময় সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। মৌলভীবাজার সদর পৌরসভার মাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পূর্ব শিলমন্দী ভোট কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা সকালের খবরের মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আরাফাতুজ্জামান বাবুর মাথায় আঘাত করলে তিনি রক্তাক্ত যখম হন। একই কেন্দ্রে আরটিভির ক্যামেরা ভাঙচুর ও ক্যামেরাপারসন আবু তাহেরকে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ পৌরসভার রহমতগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে ভোট দেওয়ার ছবি তোলায় স্থানীয় দৈনিক যমুনা প্রবাহের সহকারী সম্পাদক নওশাদ আহম্মেদকে মারধর করেছে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন।

 এ সময় সাংবাদিকের ব্যবহূত ক্যামেরা ভাঙচুর করে দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় : রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে (ইসি) কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন গণমাধ্যমের কর্মীরা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দ্বিতীয় তলার যে ব্লকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও কমিশনের সচিব সিরাজুল ইসলাম বসেন, সে ব্লকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ইসিতে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকরা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা এর আগে আর কখনো ঘটেনি। এ ব্যাপারে সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, কাজে অসুবিধা হবে। এ জন্য সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর