রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

শোষিত আর শোষকের ধারায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ

বিলাতের রাজনীতি ২

আ স ম মাসুম, লন্ডন থেকে

শোষিত আর শোষকের ধারায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ

তিন বছরে কাউন্সিল হওয়া নিয়ম; কিন্তু বিগত কাউন্সিলের বয়স পাঁচ বছরে পড়েছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এভাবেই আছে। সরকারি দল হওয়ায় স্বভাবতই একটি গ্রুপ ব্যস্ত টাকা কামানোতে আবার আরেকটি গ্রুপ ব্যস্ত রয়েছে মিছিল মিটিং আর কর্মসূচিতে। তৃণমূল থেকে কাউন্সিলের দাবি ওঠা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে এখন বলা যায় শোষিত এবং শোষক এই দুই ধারায় বিভক্ত একটি রাজনৈতিক দল। শোষিতরা সবসময়ই দলের মঙ্গলে কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে, অনেকটা ঘরে খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো। শোষকরা স্যুট-কোট পরে সারা বছরই বাংলাদেশ-ব্রিটেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্যে সক্রিয়। এদের কেউ কেউ কথায় কথায় ছোট আপা অর্থাৎ শেখ রেহানা আর জয় ভাইয়ের লোক বলে নিজেদের পরিচয় দিতে অভ্যস্ত। ২০১১ সালের ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন সুলতান শরীফ আর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। সেই নির্বাচনের পর দলের যতটুকু কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। দলের কিছু সংখ্যক নেতা গ্রুপ তৈরি করতে লেগে যান। আবার এদেরই একটা অংশ ব্যস্ত হয়ে যান বাংলাদেশে তদবির বাণিজ্যে, নিজেদের ব্যবসায়িক অবস্থান সুদৃঢ় করতে। এ ছাড়া লন্ডনের একটি অংশ ব্যস্ত হয়ে যায় মন্ত্রী-মিনিস্টারদের নিয়ে লোক দেখানো কর্মসূচিতে। সেই সুযোগে যুক্তরাজ্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ শরিক সংগঠনগুলো বাংলাদেশ সরকারবিরোধী আন্তর্জাতিক জনমত আদায়ে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের শুরু পর্যন্ত সরকারবিরোধী এই সংগঠনগুলো অন্তত পাঁচ শতাধিক প্রোগ্রাম করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, ব্রিটিশ এমপি, হাউস অব কমন্স, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কেন্দ্রিক। সেইসব কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সরকার বেশ ভালোই বেকায়দায় পড়ে। এর উত্তরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ছিল এর ৫ ভাগের ২ ভাগ। আন্তর্জাতিক লবিং নয়, শুধুমাত্র জাতীয় ও দলীয় দিবস ভিত্তিক কার্যক্রমে আবদ্ধ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। এতে মূলত হতাশ হয়ে পড়েন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তৃণমূল থেকে উঠে আসা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহ শামীম আহমেদ বলেন, স্যুট-কোটধারী নেতারা যেভাবে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত সেভাবে দলের কর্মসূচিতে নেই। শুধু কেন্দ্র থেকে মন্ত্রীরা এলে এদের দেখা যায় সবার আগে। অথচ দলের অনুষ্ঠানে চাঁদা দিতে গেলে রেস্টুরেন্টে চাকরি করা কর্মী যে চাঁদা দেন, সুবিধাভোগীরাও দেন সেই পরিমাণ। এক নেতা জানান, তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চাইলেও সিনিয়র অনেক নেতা চাইছেন না কাউন্সিল হোক। কাউন্সিল হলে তাদের দায়িত্ব বাড়বে সেক্ষেত্রে নিশ্চিন্তে ব্যবসা বাণিজ্য আর আখের গোছানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। অনেক সিনিয়র নেতা বাংলাদেশে এমপি হওয়ার ধান্ধায় আছেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বে এলে বাংলাদেশে এমপি হওয়ার ব্যাপারে সভানেত্রীর ‘না’ বলার সম্ভাবনা। তাই অনেকে চাইছেন না কাউন্সিল হোক। আবার অনেক যোগ্য নেতা শুধু টাকা-পয়সার দিকে দুর্বল থাকায় সাহস করছেন না এমন পদে আসতে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক জানান, গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরকে কেন্দ্র করে ১০টির বেশি বড় অনুষ্ঠানে প্রায় হাফ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়ে যায় যার বেশিরভাগ টাকা এসেছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সহযোগিতার কারণে। এখানে যার যার সাধ্যমতো সহায়তা করেন। কাউন্সিল না হওয়ার পেছনে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হতাশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হতাশ হয়ে লাভ নেই। কাউন্সিলের বিষয়টি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করে। আমাদের আগে ১০-১২ বছর পর্যন্ত কমিটি হয়নি। দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ ব্যবসা-তদবির নিয়ে ব্যস্ত এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সৈয়দ ফারুক বলেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ৬৫টি অঙ্গসংগঠন নিয়ে পরিচালিত হয়। আমাদের কোনো নেতা-কর্মী দল ভাঙিয়ে ব্যবসা বা তদবিরে লিপ্ত নয়। ব্যক্তিগত অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য আছে সেটা অন্যসব প্রবাসীদের মতোই।

সর্বশেষ খবর