শিরোনাম
রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

জেল থেকে গউছ কেন জয়ী

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

জেল থেকে গউছ কেন জয়ী

হবিগঞ্জের পাঁচটি পৌরসভায় নীরব ভোট বিপ্লব হয়েছে। আর এ ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জেলার ৩টিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার সাময়িক বরখাস্ত মেয়র কারান্তরীণ জি কে গউছ। নির্বাচনী ফলাফলে জি কে গউছ পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৯৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান নারিকেল গাছ মার্কায়  পেয়েছেন ৯ হাজার ২৬৩ ভোট। তিনিও তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চমক দেখিয়েছেন হবিগঞ্জবাসীকে। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম পান ৭ হাজার ৪০৩ ভোট। মেয়র পদে এ বিজয় তার হ্যাটট্রিক।

কারাগারে থেকেও জি কে গউছ নির্বাচিত হওয়ায় বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অথচ তার কর্মী-সমর্থকরা সঠিকভাবে প্রচারণাও করতে পারেননি। যারা প্রচারণা করেছেন, তারা নিজেরা অনেকটা গা বাঁচিয়েই প্রচারণা করেছেন। নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে বিএনপির অনেক  নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এড়াতে মাঠ থেকে চলে যেতে হয়েছে।

বুধবার নির্বাচনের দিনেও বিএনপিকে মাঠে তেমন দেখা যায়নি। অন্যান্য প্রার্থীর সমর্থকরা বুকে মার্কা ঝুলিয়ে যেভাবে ঘুরেছেন, গউছের সমর্থকদের তেমনটা দেখা যায়নি। যে দু-একটি ভোট কেন্দ্রে হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে তাতেও বিএনপিকে নিরাপদ অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে গউছের বিজয়কে নীরব ভোট বিপ্লব বলেই মনে করছেন সচেতন মহল। সাধারণ ভোটার ও সচেতন মহলের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, জি কে গউছ জয়ী হওয়ার পেছনে নারী ভোটার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছেন। তাকে ভোট দিয়ে অনেকেই সহানুভূতি দেখিয়েছেন। শুধু ধানের শীষ প্রতীক দেখে নয়, গউছের ব্যক্তি ইমেজ, তার পুত্র মঞ্জুরুল কিবরিয়া প্রীতম ও তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার হ্যাপী মাঠে প্রচারণা চালিয়ে অনেকাংশেই তাকে এগিয়ে নিয়ে  গেছেন। যার ফলে জি কে গউছ তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা অর্জন করলেন। অন্যদিকে মেয়র পদে নবীগঞ্জ পৌরসভায় পরপর তিনবার নির্বাচিত অওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম  চৌধুরীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেন কাউন্সিলর পদে হ্যাটট্রিক অর্জনকারী বিএনপির প্রার্থী আলহাজ ছাবির আহমেদ চৌধুরী। নির্বাচনের আগে নবীগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা ছিল একেবারেই ক্ষীণ। সে অবস্থান থেকে শুধু নিজের জনপ্রিয়তা ও দলের নেতা-কর্মীদের নির্ঘুম প্রচারণার মধ্য দিয়ে মানুষের মন জয় করে নির্বাচিত হন ছাবির আহমেদ। বুধবার সকাল থেকেই ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা ও উত্সবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন। এখানে বিএনপির প্রার্থী পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ ছাবির আহমেদ চৌধুরী ৫ হাজার ৬২১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান  মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী পান ৩ হাজার ৭৭৩ ভোট। ওই পৌরসভায় প্রথমে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বাড়তে থাকে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তত্পর। তবে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর নির্বাচনে সাবেক পৌর চেয়ারম্যান হাজী জাহির আহমেদ ময়না মিয়ার ছেলে ফরিদ আহমেদ অলি পরপর দুবার নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। বুধবার তাকে পরাজিত করে চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. ছালেক মিয়া। অবশ্য ছালেক মিয়া নির্বাচিত হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে ওই এলাকায় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর  থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভাসহ এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এদিকে পরাজিত বিএনপির প্রার্থী ফরিদ আহমেদ অলি পরপর দুবার মেয়র ছিলেন। এর আগে ফরিদের পিতা হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির নেতা হাজী জাহির আহমেদ ময়না মিয়াও ছিলেন ওই পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। পিতার মৃত্যুর পর নির্বাচনে অংশ নিয়ে ফরিদ আহমেদ অলি মেয়র নির্বাচিত হন। চুনারুঘাট ও মাধবপুর পৌরসভায় সাবেক মেয়ররাই নির্বাচিত হয়েছেন। চুনারুঘাট পৌরসভা নির্বাচনে মাত্র ১৪ ভোট বেশি  পেয়ে বিজয়ের মালা পরেছেন বিএনপির নাজিম উদ্দিন আহমেদ সামছু। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৩৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফুল আলম রুবেল নৌকা প্রতীকে ভোট পান ৪ হাজার ৭২১ ভোট। ভোটগ্রহণ চলাকালে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্য পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে টহল দেয়। মাধবপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিরেন্দ্র লাল সাহা নৌকা প্রতীকে মাত্র ৭৮৫  ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি পান ৫ হাজার ৭৩৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক পান ৪ হাজার ৯৪৮ ভোট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর