শিরোনাম
শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি

ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় মানুষের ঢল

রুহুল আমিন রাসেল

একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি

ছুটির দিনে গতকাল বাণিজ্যমেলায় প্রবেশে দীর্ঘলাইন —জয়ীতা রায়

দেশি-বিদেশি বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রয়কর্মীরা। সঙ্গে আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ের হিড়িক। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে ‘একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি’র মতো অনেক লোভনীয় অফার। আর তাতেই সাড়া দিয়ে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় ঢল নামে ক্রেতা-দর্শনার্থীর। মেলাপ্রাঙ্গণ পরিণত হয় জমজমাট উৎসবমুখর পরিবেশে।

রাজধানীর শেরেবাংলানগরে গতকাল মেলাপ্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে সূর্যের আলো ছড়ানোর পরপরই আসতে শুরু করেছেন বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা। আর সকাল ১০টায় মেলার প্রবেশপথে ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীর ছোট ছোট লাইন। বেলা গড়িয়ে দুপুর হওয়ার আগেই জমজমাট হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। বিকালে উপচে পড়া ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়ে সংশ্লিষ্টদের। এ অবস্থা ছিল রাত ১০টা পর্যন্ত। গতকালের মেলায় প্রায় দেড় লাখ ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবেশপথের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মীর ব্রাদার্সের কর্ণধার মীর শহিদুল আলম। দর্শনার্থীর এ বিপুল সাড়া পেয়ে খুশি মেলার আয়োজকরা। মাসব্যাপী ২১তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ)- ২০১৬-এর আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি নতুন পণ্যসামগ্রী দেশি-বিদেশি ক্রেতা-দর্শনার্থীর সামনে উপস্থাপন করতেই প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করে আসছে সরকার। মেলায় কেনাকাটার পাশাপাশি বিনোদন পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন ক্রেতারা। আলাপকালে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আসা সেলিনা রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেলা থেকে ঘর-সংসারের জন্য কিছু তৈজসপত্র ও ছেলের জন্য একটি সাইকেল কিনেছি। কেনাকাটায় এখানে সুবিধা হিসেবে পেয়েছি মূল্যছাড়। এ ছাড়া এ শহরে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর তেমন একটা জায়গা নেই। এ সুযোগে ওরা কিছুটা বিনোদন পেয়েছে। সব মিলিয়ে এক ছাদের নিচে অনেক পণ্য পাওয়ার সুবিধা আছে।’ শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, বাণিজ্যমেলায় আসছে ঢাকার বাইরের ক্রেতা-দর্শনার্থীও। তাদেরই একজন ভৈরব থেকে আসা তৌহিদুল ইসলাম সিফাত। স্ত্রীসহ মেলায় আসা এ ক্রেতা জানালেন, ‘এখানে অনেক দেখেশুনে, মনের মতো পণ্য কেনার সুযোগ আছে। পণ্যের মানটা ভালো বোঝা যায়। আছে মূল্যছাড়। আরও আছে নিত্যনতুন রকমারি পণ্য।’ কয়েকজন বিক্রয়কর্মী জানালেন, গতকালই মেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়েছে। প্রতি বছরই মেলার প্রথম শুক্রবার থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে বাড়ে বিকিকিনি। গতকালের বিকিকিনিতে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা। মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে আরও দেখা মেলে বড় বড় প্যাভিলিয়নে দেশীয় পণ্যের পসরা। অতীতের তুলনায় এবার মেলায় দেশি পণ্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। কী নেই মেলায়? এমন প্রশ্ন জেগে উঠতেই পারে অনেকের মনে। হয়তো তারও উত্তর মিলবে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে। এবারের মেলায় প্রধান প্রধান পণ্য তালিকায় আছে— কসমেটিক, ইলেকট্রিক্যাল, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, স্পোর্টস গুডস, মেশিনারিজ, কার্পেট, জুয়েলারি, জুতা, কাপড়সামগ্রী ইত্যাদি। সব মিলিয়ে ছোট-বড় সবার প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো কমতি নেই। পাশাপাশি রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলাপ্রাঙ্গণ সবার জন্য উন্মুক্ত। তিনটি প্রবেশপথ দিয়ে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। তবে একটি প্রবেশপথ শুধু ভিআইপি দর্শনার্থীর জন্য সংরক্ষিত। মেলায় প্রবেশে জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। শিশুদের ২০ টাকা। যেসব শিশুর বয়স দুই বছরের কম, তাদের জন্য কোনো প্রবেশ টিকিটের প্রয়োজন হবে না। ইপিবি জানিয়েছে, এবারের বাণিজ্যমেলায় ১৩টি ক্যাটাগরিতে মোট ৫৫৩টি স্টল আর ৯৪টি প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশসহ ২১টি দেশের নামিদামি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, মরিশাস, ঘানা, নেপাল, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। মেলায় দেশীয় নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে ৩৮টি স্টলে। আর নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করতে প্রতি বছরের মতো এবারও আছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। আছে দুটি মা ও শিশু কেন্দ্র এবং একটি প্রাথমিক চিকিত্সা কেন্দ্র। মসজিদ, এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, প্রতিবন্ধীদের জন্য আছে অটিজম সেন্টার, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক, ই-শপ, ই-পার্ক ও পর্যাপ্ত টয়লেট। মেলাপ্রাঙ্গণে ২৫টি খাবার স্টল ও ৫টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এ ছাড়াও আছে ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আয়োজকদের তথ্যমতে, এবার মেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য আছেন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য। যে কোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে রয়েছে ফায়ার ব্রিগেড। এ ছাড়াও মেলাপ্রাঙ্গণ ও আশপাশ এলাকার নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১০০ সিসি ক্যামেরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর