শিরোনাম
শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
কাজী আরেফ হত্যা

পাঁচ খুনি কোথায়, প্রশ্ন স্বজনদের

কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদসহ পাঁচ নেতা হত্যা মামলার তিন আসামির লাশ গতকাল দাফন করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের লাশ নিজ গ্রামে দাফন হলেও অন্য দুই খুনির লাশ অন্য স্থানে দাফন করতে হয়েছে। এদিকে, তিন ঘাতকের ফাঁসি হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।

জানা যায়, কাজী আরেফসহ পাঁচ জাসদ নেতা হত্যাকাণ্ডের পর মামলা হলেও গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান আনোয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর পরিবারের সদস্যরা। এ কারণে গতকাল ভোরে কুষ্টিয়ার পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয় মিরপুর উপজেলার কুর্শা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের লাশ। একই ইউনিয়নের কুলপাড়া মল্লিকপুর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর লাশ দাফন করা হয় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামে। তবে আরেক ঘাতক সাফায়েত হোসেন হাবিবকে নিজ গ্রাম মিরপুর উপজেলার রাজনগরে দাফন করা হয়। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১৭ বছর পর রায় কার্যকরের সংবাদে খুশি হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন নিহতদের পরিবারের সদস্য ও জাসদ নেতারা। এক প্রতিক্রিয়ায় নিহত ইয়াকুব আলীর ছেলে ইউসুফ আলী রুশো বলেন, রায় কার্যকরের খবরে আমরা অনন্দিত। তবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট সেদিন হব যেদিন বাকি পাঁচ ঘাতক ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে। কাজী আরেফ আহমেদের ভাতিজা কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, সব আসামির রায় কার্যকর হলে চাচার আত্মা শান্তি পাবে। জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহাসিন বলেন, কাজী আরেফসহ পাঁচ নেতা হত্যা সাধারণ খুনের কোনো ঘটনা নয়। এটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, খুনিদের সঙ্গে আরেফ ভাইয়ের কোনো বিরোধ ছিল না। এমনকি তারা কাজী আরেফকে চিনতও না। আসলে খুনিরা সবাই ভাড়াটে, একটি মহল তাদের দিয়ে এ নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। তাই পর্দার অন্তরালের কুশীলবদেরও খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ১ মিনিট থেকে ১১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তিন আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পরে রাতেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী এক জনসভায় কাজী আরেফ আহমেদ, জেলা জাসদ সভাপতি লোকমান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও শমসের মণ্ডল একদল সন্ত্রাসীর গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

ঝন্টুর লাশ চুয়াডাঙ্গায় দাফন : রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর লাশ দাফন হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় গ্রামের রিয়াজুল জাননাহ কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত হোসেন জানান, শুক্রবার ভোররাতে যশোর কারাগার থেকে রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর লাশ নিয়ে আসা হয় দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামে। গ্রামের কবরস্থানসংলগ্ন মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পরপরই দাফন করা হয় লাশ। উজিরপুর গ্রামবাসী লাশ দাফনে অংশ নেয়। লাশ দাফনের পর রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর বোন নারগিস খাতুন দাবি করেন, তার ভাই ছিলেন নির্দোষ। কাজী আরেফ হত্যার সঙ্গে তার ভাই জড়িত ছিলেন না। প্রসঙ্গত, রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু আত্মসমর্পণের আগে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামে তার বোন নারগিস খাতুনের কাছে থাকতেন। বৃহস্পতিবার রাতে যশোর কারাগার থেকে তার লাশ গ্রহণ করেন ঝন্টুর ভাই ও নিকটাত্মীয় কয়েকজন।

সর্বশেষ খবর