শিরোনাম
শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশ্ব ইজতেমা

জুমার নামাজে লাখো মুসল্লি, কাল আখেরি মোনাজাত

মোস্তফা কাজল, খায়রুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন, টঙ্গী থেকে

জুমার নামাজে লাখো মুসল্লি, কাল আখেরি মোনাজাত

ইজতেমার প্রথম দিনে জুমার নামাজে গতকাল মুসল্লিদের ঢল ময়দান ছাড়িয়ে টঙ্গী স্টেশন রোডে —রোহেত রাজীব

লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আয়োজন। গতকাল ইজতেমা ময়দানে হাজার হাজার মুসল্লির কণ্ঠে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। আজ ১০০ বর-কনের যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানো হবে। আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের আয়োজন। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে ১৫ জানুয়ারি থেকে ফের শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুই পর্বের আয়োজন। গতকাল অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তম জুমার জামাত। এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় আগত ৪ জন মুসল্লি গতকাল শীত ও বার্ধ্যকজনিত কারণে মারা যান। জুমার নামাজের পর মৃতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আগত মুসল্লিদের আলাহু আকবার ধ্বনি ও জিকির-আসকারে ভারি হয়ে ওঠে টঙ্গী-উত্তরার আকাশ-বাতাস। তুরাগ তীরের যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু সাদা পাঞ্জাবি আর টুপি পরা মানুষের ভিড়। গতকাল জুমার নামাজের শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাই করে নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তত্পর দেখা গেছে। এ সময় পুরো ময়দানে অভিযান চালিয়ে ৪০ হকারকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া ইজতেমা মাঠের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার টহল জানান দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে একটি অস্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে। গতকাল ইজতেমা মাঠে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল জুমার নামাজ আদায় করেন। পরে তারা সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, পুরো ইজতেমা মাঠকে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা  বেষ্টনীতে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা সাদা পোশাকে মাঠের ভিতরে অবস্থান করছেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জঙ্গি তত্পরতাকে মাথায় রেখে সবকিছু করা হচ্ছে। আজ ইজতেমার দ্বিতীয় দিন। গতকাল সকাল থেকেই সর্বস্তরের মুসলমানকে জুমার জামাতে শামিল হওয়ার জন্য টুপি, পাঞ্জাবি পরে জায়নামাজ হাতে ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। দেশ-বিদেশের অগণিত মুসল্লির সঙ্গে একই জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের সমাবেশ ঘটে গতকালের জুমার জামাতে। টঙ্গী, উত্তরা, কামারপাড়া, মিরপুর, আবদুল্লাহপুর প্রভৃতি এলাকার মসজিদে মসজিদে গতকালের জুমার জামাতে মুসল্লি সংখ্যা ছিল খুবই কম। ইজতেমা মাঠে জুমার জামাত সুবিশাল প্যান্ডেলের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিস্তৃতি লাভ করে চারপাশের সড়কেও। জুমার জামাতে ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা যোবায়েরুল হাসান।

যারা বয়ান করেন : বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আবদুর রহমানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। বাদ জুমা বয়ান করেন নিজামউদ্দিন, বাদ আসর বাংলাদেশের মাওলানা যোবায়ের হাসান, বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান। গতকাল আমবয়ানের বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আবদুল মতিন।

বয়ানে যা বলা হলো : বয়ানে বলা হয় গরিবের জন্য ঈদের নামাজের পর অতি উত্তম ইবাদত হলো শুক্রবারের জুমার নামাজ। এ দিনে আল্লাহর কাছে যে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। এ নামাজ আদায় করার তৌফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন। জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে অজু-গোসল করে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার আমলনামায় নেকি লেখা শুরু হয়ে যায়। আমরা যা করব আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যই করব। আল্লাহপাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। ইমান, আমল ও দাওয়াতের মেহেনত সম্পর্কে বাদ জুমার বয়ানে মাওলানা শওকত আলী বলেন, পৃথিবীতে যেদিন থেকে ইমানদারি চলে যাবে সেদিন থেকে পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর নানা স্তর ধ্বংস হয়ে যাবে। গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ এমনি করে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। একমাত্র আল্লাহই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন। পৃথিবীতে ইমানের মূল্য অনেক বেশি। ইমানকে মজবুত করতে হলে আমাদের দাওয়াতি কাজে সময় লাগাতে হবে।

আজ যৌতুকবিহীন বিয়ে : বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আজ (শনিবার) আসর নামাজের পর শতাধিক বর-কনের উপস্থিতিতে যৌতুনবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

হকার, পকেটমার ও ছিনতাইকারী গ্রেফতার : টঙ্গী মডেল থানা পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা গতকাল ইজতেমা মাঠ ও এর আশপাশ থেকে অর্ধশতাধিক হকার, পকেটমার ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে। আজ তাদের গাজীপুর আদালতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জুমার নামাজের সময় এবং বাড়ি ফিরতে গিয়ে পকেটমারদের হাতে মুসল্লিদের কমপক্ষে ৩০টি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আইন প্র্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ৬ জন পকেটমার গ্রেফতার হয়। অপর এক অভিযানে ৪০ জন হকারকে আটক করা হয়।

১৫ কিলোমিটার এলাকা যানজট : গতকাল জুমার নামাজ পড়ার জন্য কয়েক লাখ মুসল্লির সমাগম হয় ইজতেমার মাঠে। এ কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কালিগঞ্জ সড়ক ও আশুলিয়া-সাভার সড়কে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে থাকে। অনেক মুসল্লিকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

আট মোবাইল কোর্ট : ইজতেমা স্থল ও আশপাশের অঞ্চলকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন দুই ভাগে চারটি করে আটটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন।

বিকল্প সড়ক ও পার্কিং : দুই পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার জন্য গাজীপুর জেলার চান্দনা চৌরাস্তা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি হেঁটে ইজতেমা ময়দানে যাতায়াত করবেন। এ কারণে ১১ থেকে ১৮ জানুয়ারি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সকাল ৬টা থেকে আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়াও কালিগঞ্জ-টঙ্গী মহাসড়কের মাজুখান ব্রিজ থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড ওভারব্রিজ পর্যন্ত এবং কামারপাড়া ব্রিজ  থেকে মুন্নু টেক্সটাইল মিল গেট পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকবে। ট্রেনে এক লাখ মুসল্লি পরিবহন : নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবার ২৮টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে রেলওয়ে। এতে অতিরিক্ত ২০টি কোচ সংযোজনের পাশাপাশি প্রয়োজনে কোচ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর