শিরোনাম
শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

ভিতরগড়ে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

ভিতরগড়ে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক

পঞ্চগড়ের অন্যতম দর্শনীয় স্থান মহারাজার দিঘিতে এখন পরিযায়ী পাখির ভিড়। সকাল-বিকাল পুকুরের পানি আর পাড়ের উঁচু ঢিবিতে বিশাল বিশাল গাছের ডালে এখন হাজার হাজার পাখি। সারা দিন পাখির কলতানে মুখরিত প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো এ দিঘি।

মহারাজার দিঘিতে প্রায় সারা বছরই পাখির কলতান থাকে। শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা এলে এ অসাধারণ আবহের সঙ্গে যোগ হয় নতুন মাত্রা। সেই সঙ্গে চেনা দৃশ্যও বদলে যায়। পাখি দেখার জন্য স্থানীয় এবং দেশের নানা প্রান্তের পর্যটক ছুটে আসেন। বিকাল হলেই মহারাজার দিঘিতে নামে পানকৌড়ির ঝাঁক। তাদের ডুবসাঁতার চলে থেমে থেমে। মাঝেমধ্যেই ছলাত্ ছলাত্ শব্দে পানির নিচ থেকে ঠোঁট দিয়ে মাছ তুলে নিচ্ছে হরেক রকমের মাছরাঙা। গাছে গাছে ঝুলছে বাদুড়। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি পাতিসরালিরা এখন মহারাজার দিঘিতে গা ভেজায়।

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভারতের পশ্চিম বাংলার জলপাইগুড়ি সীমান্তের ভিতরগড় গ্রামে এ দুর্গনগরী। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এ দুর্গনগরী গড়ে ওঠে। ইতিমধ্যে খননের মাধ্যমে ষষ্ঠ শতকের নয়টি স্থাপত্য কাঠামোর নিম্নাংশ এবং মাটি ও ইট নির্মিত অভ্যন্তরীণ চারটি আবেষ্টনীর প্রকৃত স্বরূপ আবিষ্কৃত হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার ২৫০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত ভিতরগড় দুর্গনগরী বাংলাদেশে এ যাবত্ প্রাপ্ত দুর্গনগরীগুলোর মধ্যে সর্ববৃহত্। এ দুর্গনগরী নিয়ে অনুসন্ধান এবং গবেষণা করছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের প্রত্নতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. শহনাজ হুসনে জাহান। তার প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর আলোকে অনুমান করা যায় যে, ভিতরগড় একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সারা বছর চাষাবাদের জন্য সেচব্যবস্থা এবং নদীর পানি নিয়ন্ত্রণে নিপুণ কৌশলের অধিকারী ছিল ভিতরগড়ের প্রাচীন জনপদ। প্রাচীন বাণিজ্য সড়ক ও নদী পথের ওপর অবস্থিত হওয়ায় ভিতরগড়ের প্রাচীন জনপদ সম্ভবত তিব্বত, চীন, নেপাল, ভুটান, সিকিম, আসাম, কোচবিহার এবং মধ্য ও নিম্ন গঙ্গা উপত্যকায় অবস্থিত অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।

এ দুর্গনগরীর ভিতরে রয়েছে বেশ কিছু দিঘি। প্রজাদের জন্য সুপেয় জল এবং চাষাবাদে সেচের ব্যবস্থা করতে গিয়ে এ দিঘিগুলো খনন করেন প্রাচীন রাজা পৃথ্বীরাজ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দিঘি মহারাজার দিঘি। রাজার উদ্যোগে খোঁড়া হয়েছে বলেই এ দিঘির নাম মহারাজার দিঘি। দিঘির অনতিদূরেই ছিল তার রাজপ্রাসাদ। বাংলাদেশের প্রাচীনতম দিঘিগুলোর মধ্যে একমাত্র এ দিঘিতে ইটের শান বাঁধানো ঘাট লক্ষ্য করা যায়। কথিত আছে, কিচকদের আক্রমণে রাজা সপরিবারে এ দিঘিতে আত্মাহুতি দেন। ৫৩ একর জমি জুড়ে এ দিঘিতে পানি রয়েছে ৩৩ একর। গভীরতা ২০ ফুট। দিঘির চারপাশে উঁচু পাড়ে রয়েছে অসংখ্য গাছ। ইট ও মাটি দিয়ে নির্মিত সুউচ্চ পাড় এবং ১০টি ঘাট এ দিঘির অনুপম দৃশ্যের এক অসাধারণ নিদর্শন। আর পরিযায়ী পাখিরা এসে বৃদ্ধি করেছে এর সৌন্দর্য। বর্তমানে এ দিঘির আশপাশে ড. শহনাজ হুসনে জাহানের নেতৃত্বে চলছে খননকাজ। তিনি জানান, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব ছাড়াও মহারাজার দিঘিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের লীলাভূমি বলা যায়। পাখির ভিড়ে মহারাজার দিঘি কল্লোলিত হয়ে উঠলেও শিকারিরা থেমে নেই। প্রায়ই তারা নানাভাবে পাখি শিকার করে। এ ছাড়াও দিঘির চারপাশে গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি, চা বাগান। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন এ দিঘিটির সৌন্দর্য।

সর্বশেষ খবর