শনিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সুভাষ বসুর গোপন নথি প্রকাশ হবে আজ

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

তিন মাস আগে নেতাজি পরিবারের সদস্য ও গবেষকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, নেতাজি-জয়ন্তীতে সুভাষ চন্দ্র বসু-সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ শুরু করা হবে। গোটা দেশের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার প্রেক্ষাপটে আজ সেই নথি প্রকাশিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ নেতাজি-সংক্রান্ত বেশ কিছু ফাইলের ডিজিটাল সংস্করণ প্রকাশ করা হবে জনসাধারণের জন্য।

সরকারের কাছে থাকা নেতাজি-সংক্রান্ত গোপন নথিপত্র প্রকাশ্যে আনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল রাজনৈতিক চাপানউতোর। সেপ্টেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের কাছে থাকা ৬৪টি গোপন ফাইল প্রকাশ করা হয়। নেতাজিকে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে থাকা ফাইলগুলো প্রকাশ্যে আনা নিয়ে মোদি সরকারে ওপর সে সময় চাপও সৃষ্টি করছিলেন মমতা। রাজ্যের নথিগুলোতে অন্তর্ধান-সংক্রান্ত কোনো তথ্য না থাকলেও মমতার পদক্ষেপে নড়েচড়ে বসেন মোদি। আর এ সবকিছুরই ফল, আজ নেতাজিকে ঘিরে রচিত হতে চলেছে এক মেগা চিত্রনাট্য। গতকাল কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে সুভাষ চন্দ্র বসু-সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ্যে আনার প্রক্রিয়াটি শুরু করে দিয়েছিল। যেখানে যা রয়েছে সেগুলো একত্র করে জাতীয় লেখ্যাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও কিছু ফাইল আসে। প্রাথমিকভাবে মোট ১০০টি ফাইলের সংস্কার এবং ডিজিটাল সংস্করণের কাজ করা হয় এরপর। আজ শনিবার ওই ১০০টি ফাইলের কতগুলো মোদি প্রকাশ করবেন তা অবশ্য এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়নি। আজ দিল্লিতে যখন গোপন নথি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হবে, তখন নেতাজি-সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ তদন্ত দল গঠন, ২৩ জানুয়ারিকে রাজ্যে দেশপ্রেম দিবস হিসেবে ঘোষণা ইত্যাদি দাবিদাওয়া নিয়ে দিল্লির রাজপথে মিছিল করতে চলেছে ফরোয়ার্ড ব্লক। পাশাপাশি দিল্লিতে এই প্রথম একটি নেতাজি ভবনের উদ্বোধন করবেন অশোক ঘোষ। দলের প্রবীণ এই নেতাকে আজই কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে দিল্লিতে। দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের কথায়, ‘নেতাজির সব ফাইল প্রকাশ হবে কি না আমরা জানি না। আমাদের দাবি, স্বাধীনতা-সংগ্রামের এই ঘেরাটোপে থাকা দিকটিকে জানার জন্য, বিভিন্ন দেশের সেই সময়কার অবস্থান বোঝার খাতিরে সব তথ্য সামনে আসুক। শুধু ভোটের আগে রাজনৈতিক স্বার্থে যেন একে ব্যবহার না করা হয়।’ এই ফাইল প্রকাশের পর রাজনৈতিক চাপানউতোরকে কিন্তু অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। এমনিতেই নেতাজি-আবেগ নিয়ে দেশে সলতে পাকানো চলছে।

বিষয়টি নিয়ে কার্যত কোণঠাসা সোনিয়া গান্ধির দল। সেই আবেগকে উসকে দিতে নভেম্বরে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ বাহিনীর স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন মোদি। ঘটনা হলো, এর আগে নেতাজি-সংক্রান্ত দুটি ফাইল প্রকাশ করায় বেদম অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। সেখানে দেখা গিয়েছিল, নেতাজির অন্তর্ধানের পরও তার পরিবারের ওপর চলছে গোয়েন্দাদের নজরদারি। সেই তথ্য প্রকাশ পেতেই দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। স্বাধীন ভারতের দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গ এ দুই জায়গাতেই তখন কংগ্রেসের সরকার। ফলে অস্বস্তি কাটাতে পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় গিয়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক স্বার্থে নেতাজিকে ব্যবহার করছে মোদি সরকার। এরপর কেন্দ্রের হাতে থাকা নেতাজি-সংক্রান্ত গোপন ফাইলগুলো প্রকাশের সম্ভাবনা দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গড়েন মোদি। ফাইলগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর, কংগ্রেসের অস্বস্তি আরও বাড়বে কি না এখন সেটিই দেখার। সেই চাপ কাটানোর জন্য এ নিয়ে এখনই কোনো আগাম রণকৌশল নিতে চাইছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। ফাইলগুলো পড়ে দেখার পরই এ ব্যাপারে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোনিয়া গান্ধির দল।

সর্বশেষ খবর