বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

অর্থনৈতিক বৈষম্যে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত

-----------আবুল কাশেম

অর্থনৈতিক বৈষম্যে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, সে তুলনায় রংপুর অনেক পিছিয়ে আছে। অর্থনৈতিক সুষম উন্নয়ন এখনো ঘটেনি। বরাবরই অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার রংপুর। উন্নয়ন বাজেটের ২-৩ শতাংশ বরাদ্দ মেলে রংপুরের ভাগে। বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন তেমন নেতৃত্বও নেই। অর্থনৈতিক বৈষম্যই জেলার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আরসিসিআই) সভাপতি আবুল কাশেম। আরসিসিআই সভাপতি বলেন, অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী রংপুরকে বিভাগ, রংপুর সিটি করপোরেশন ও বেগম রোকেয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এ ছাড়া মেরিন একাডেমি স্থাপন ও নগরীর প্রধান সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বার্ন ইউনিট, আইসিইউ, সিসিইউ, ট্রমা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ করার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি, ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান এবং একটি বাড়ি একটি খামার কর্মসূচির মাধ্যমে রংপুর থেকে মঙ্গা বিতাড়িত হয়েছে। চেম্বার সভাপতি বলেন, এখন পর্যন্ত এখানে নতুন করে ভারী শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। এগিয়ে আসছেন না বেসরকারি উদ্যোক্তারাও। এখানে শিল্প স্থাপনে পরিবেশ তৈরি হয়নি। ব্যাংকগুলো শিল্প স্থাপনে ঋণ দেওয়ার সাহস পায় না। স্থানীয় ব্যাংকগুলো শিল্পক্ষেত্রে সহযোগিতা না করে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, বাড়ি নির্মাণ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে মোটা ঋণ প্রদানে আগ্রহী। ব্যাংকঋণের অনিশ্চয়তা, উত্পাদিত পণ্যের বিপণন সমস্যা, ঝুঁকি ও গ্যাস না থাকায় পুরনো শিল্প-কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে ৩০টি ভারী শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে চার লাখেরও বেশি শ্রমিক। তার মতে, এ অঞ্চলে শিল্পায়নের জন্য সরকারকে বিশেষ তহবিল গঠন, বিনিয়োগকারীদের কর ও ব্যাংকঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান এবং দ্রুত গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। নইলে শিল্প-কারখানাগুলো যেমন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তেমনি নতুন করে আর গড়ে উঠবে না। আবুল কাশেম বলেন, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রধান শর্তই হচ্ছে জ্বালানি ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন। কাঁচামালের জন্য আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর ও মংলা বন্দরে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর রংপুর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগত পাঁচ ঘণ্টা। এখন সেখানে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যানবাহন বেড়েছে। কিন্তু সড়কের প্রশস্ততা বাড়েনি। এত যানবাহনের চাপ সড়ক সইতে পারছে না। ফলে যোগাযোগ অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে পরিবহন খরচও বেড়েছে। আরসিসিআই সভাপতি বলেন, এখানে গ্যাস নেই। গ্যাসের দাবিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। ফল হয়নি। শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হলে জ্বালানি ও বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে উত্পাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। ফলে পণ্য তৈরি করে উত্পাদন প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না রংপুর। এ কারণে এখানে ভারী শিল্প-কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। আবুল কাশেম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ লাখ ৩৪ হাজার ও কুমিল্লার সাড়ে ৬ লাখ মানুষ বিদেশে কর্মরত। সেখানে রংপুর বিভাগের আট জেলার মাত্র ৬৪ হাজার মানুষ বিদেশে রয়েছেন। বৈদেশিক কর্মসংস্থান অঞ্চল স্থাপন এবং জনশক্তি রপ্তানি এজেন্সি চালু করতে পারলে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সামর্থ্য বাড়লে মানুষ শিল্প-কারখানা স্থাপনে উদ্যোগী হবে।

সর্বশেষ খবর