রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাণিজ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাণিজ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ১২ দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (টিপিপি) কারণে বিশ্বের প্রভাবশালী ওই দেশটির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, কানাডায়ও দেশের পোশাক রপ্তানি ঝুঁকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর একে অন্যের সঙ্গে বিনিয়োগ সহযোগিতা গড়ে উঠলে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) হারাবে।

সম্প্রতি কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে এ ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারের কাছে একটি বিশদ প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনের ‘বাংলাদেশ’ অংশের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে (অর্থনীতিতে) টিপিপি চুক্তির উল্লেখযোগ্য প্রভাব কোনোভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনে দেশের গড় ট্যারিফ হার (প্রায় ৫৫ শতাংশ) কমানোর পাশাপাশি ব্যবসায় ব্যয় কমানোর জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মূলধনী পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোর বিষয়ে জোর দিয়ে অটোয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন বলেছে, এর ফলে দেশের রপ্তানি খাতে সক্ষমতা বাড়বে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশে টিপিপি চুক্তির প্রভাব সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরই বোঝা যাবে প্রকৃত অর্থে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে। আমরা এখনো এটিকে (টিপিপি) বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মনে করছি না।’

গত অক্টোবরে জর্জিয়ার আটলান্টায় বিশ্বের ১২টি দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম) নিজেদের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তুলতে একটি চুক্তি সই করে। চুক্তির শর্তগুলো পর্যালোচনার পর টিপিপি কার্যকর করতে গত বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা চুক্তিতে সই করেন। ‘প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় এ দেশগুলোর সমন্বয়ে আন্তপ্রশান্ত অংশীদারিত্ব বা ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) নামে আন্তআঞ্চলিক এ চুক্তির ফলে সৃষ্ট মুক্ত বাজারের আকার হবে ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমান বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ।

টিপিপির প্রভাব নিয়ে অটোয়া থেকে পাঠানো ৮ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিপিপিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা আমাদের রপ্তানি খাতের অন্যতম গন্তব্য। আর পোশাক রপ্তানিতে আমাদের নিকটতম প্রতিযোগী দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম। টিপিপি জোটে ভিয়েতনাম থাকায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশকে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পোশাক রপ্তানি করতে হয়। ভিয়েতনামকে দিতে হয় ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ শুল্ক। টিপিপি চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বিনা শুল্কে পোশাক রপ্তানির সুযোগ পাবে ভিয়েতনাম। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ টিপিপি জোটের অন্য ১১ দেশেও একই ধরনের সুযোগ পাবে ভিয়েতনাম। এর ফলে প্রতিযোগী দেশটির পোশাক রপ্তানিতে অতিরিক্ত সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যদিও স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে কানাডায় পণ্য রপ্তানিতে বিশেষ শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ; তবে কানাডা দুই বছর পরপর তাদের এ ‘বিশেষ সুবিধা’ পুনর্বিবেচনা করে। টিপিপির কারণে কানাডা ওই সুযোগ প্রত্যাহার করলে সেটি দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলবে। শুধু তাই নয়, টিপিপিতে চুক্তিবদ্ধ বেশির ভাগ দেশেই আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও চিলিতেও পোশাক রপ্তানি হুমকিতে পড়তে পারে। রপ্তানি খাতের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশের মালিক টিপিপিতে চুক্তিবদ্ধ ১২ দেশ। চুক্তির কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো একে অন্যকে বিনিয়োগ সুবিধা দেবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগের বেশির ভাগই যাবে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশে, যা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত করবে। এর আগে নভেম্বরে টিপিপির প্রভাব নিয়ে দেশের গবেষণা সংস্থাগুলোর মতামত নেয় সরকার। মতামতে সংস্থাগুলো জানিয়ে দেয়, টিপিপির কারণে বাংলাদেশ ০ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি হারাতে পারে, আর্থিক মূল্যে যার পরিমাণ প্রায় ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সর্বশেষ খবর