রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

জোয়ার-ভাটায় বাঁধা শিক্ষার্থীদের জীবন

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্ ও তানভীর আহমেদ, পিরোজপুর থেকে

জোয়ার-ভাটায় বাঁধা শিক্ষার্থীদের জীবন

সাধারণত  শিশুদের  প্রাথমিক শিক্ষাজীবন হয় আনন্দের। এ সময় তারা স্কুলে যাওয়া-আসা করে বাবা-মার হাত ধরে অথবা যে কোনো নিরাপদ বাহনে বা

পরিবেশে। কিন্তু ব্যতিক্রম পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নে। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হয় নিজেদের নৌকা বেয়ে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে। স্কুলের সময়সূচি নয়, নদীর জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে চলে তাদের শিক্ষাজীবন। জানা গেছে, দোবড়া ইউনিয়নের ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। এর মধ্যে ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিলাঞ্চল হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে তলিয়ে থাকে এ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। তাই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছোট-ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের বার মাসই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। নদীর জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করেই চলে এ যাওয়া-আসা।

ওই ইউনিয়নের ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো— ১১ নম্বর উত্তর গাঁওখালী আমভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২১ নম্বর মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩২ নম্বর মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২ নম্বর সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ নম্বর বিলডুমরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৭ নম্বর পদ্মডুবি শিশু শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬৫ নম্বর বিলডুমরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩৬ নম্বর পদ্মডুবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ ছাড়াও রয়েছে ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেগুলো হলো— আমভিটা বালিকা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ত্রিগ্রাম সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিলডুমরিয়া-পদ্মডুবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

আর ৩টি মাদ্রাসা হচ্ছে— ডুমরিয়া-নেছারিয়া আলিম মাদ্রাসা, ডুমরিয়া-নেছারিয়া মহিলা সিনিয়র মাদ্রাসা ও মনোহরপুর মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা।

১১ নম্বর উত্তর গাঁওখালী আমভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোকুলচন্দ্র বেপারী জানান, ভাটার সময় খালের পানি শুকিয়ে যায়। তাই জোয়ার-ভাটার কথা চিন্তা করে কখনো কখনো নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি দিতে হয়; যাতে শিক্ষার্থীরা নৌকায় বাড়ি ফিরতে পারে। ত্রিগ্রাম সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিও কম। এমনকি তিনি নিজেও অনেক কষ্ট করে স্কুলে যান, যে কষ্ট না দেখলে বোঝানো মুশকিল।

এলাকাবাসী জানান, এ বিলাঞ্চলে রাস্তাঘাট নেই। অধিকাংশ স্থান বর্ষা মৌসুমে ডুবে থাকে, নৌকা ছাড়া যাতায়াতের উপায় থাকে না। শীত মৌসুমে খালে পানি থাকে না। তখন অবস্থা আরও খারাপ হয়। জোয়ার-ভাটা দেখে স্কুলে যেতে-আসতে হয়। আবার নৌকা কিনে স্কুলে যাওয়ার মতো অবস্থা অনেকেরই নেই। অনেক সময় যে জায়গায় স্কুল সেখানে নিয়মিত যাতায়াতের জন্য কোনো নৌকাও পাওয়া যায় না। এ পরিস্থিতিতে অনেক শিশু বর্ষায় স্কুলে যেতে চায় না বা অভিভাবকরাও তাদের স্কুলে পাঠাতে চান না।

দেউলবাড়ী দোবড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মো. ওয়ালী উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিন বলেন, তার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বিলাঞ্চল হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ কম। তাই অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নৌকায় স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। তবে আগে আরও খারাপ অবস্থা ছিল।

 

বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে ও চলমান রয়েছে। পুরো ইউনিয়নকে সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৃষ্ণপদ সরকার জানান, সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বিলাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কষ্ট করেই স্কুলে আসা-যাওয়া করে। এ কারণে স্কুলে উপস্থিতিও কম।

সর্বশেষ খবর