রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

২৭ বছর পর মায়ের কোলে

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

২৭ বছর পর মায়ের কোলে

২৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়ে মনোয়ারা বেগমকে ফিরে পেলেন নাটোর সদর উপজেলার রায় আমহাটি গ্রামের  চন্দ্র বানু বেওয়া। গত বুধবার মেয়েকে ফিরে পান। বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য সাত বছর বয়সে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীর হাতে। সেখান থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। মনোয়ারার বয়স এখন ৩৫। সে মৃত আবদুস সাত্তারের মেয়ে। মনোয়ারা জানান, অভাবের সংসারে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য স্থানীয় এক বৃদ্ধার হাতে তাকে তুলে দেন মা-বাবা। পুরান ঢাকার আলুবাজারের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনে কিছুদিনের মধ্যে পালিয়ে যান তিনি। আশ্রয় নেন অন্য এক ব্যবসায়ীর বাসায়। সেখানেই কেটে যায় ১৬ বছর। এত দিন নাটোর শব্দটি ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারেননি। এক বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর নাম হারুন অর রশিদ। তারা থাকেন মগবাজার এলাকায়। রয়েছে দুই ছেলে আকাশ (১২) ও আয়ান (৬)। সন্তানরা নানা-নানীকে দেখার আবদার করেছে বহুবার। কিন্তু ঠিকানা বলতে বাবার বাড়ি নাটোরের নামটাই  মনোয়ারার মনে আছে। তাই স্বামী সাহস করে তাকে নাটোরে নিয়ে যাননি। হঠাত্ নাটোরের এক গার্মেন্ট কর্মীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গত তিন বছর ধরে সেই গার্মেন্ট কর্মী তার মা-বাবার সন্ধান করে ব্যর্থ হন। অবশেষে তিনি ওই কর্মীর সঙ্গে বুধবার ভোরে নাটোর আসেন।

একপর্যায়ে ভাটোদারা কালী মন্দিরের কাছে এলে তার মনে পড়ে, এখানে তার মেজ বোন সাজেদার বাড়ি। এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় বোনকে খুঁজে পান। কিন্তু সাজেদা প্রথমে তাকে চিনতে পারেননি। আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি যখন বলেন, তার বড় বোনের নাম কুলসুম, তখন সাজেদা চিনতে পারেন। পরে মা আর অন্য ভাইবোনদের ডেকে পাঠান। তারা মনোয়ারাকে চিনতে পারেন। জড়িয়ে ধরেন এবং বড় ভাই খলিল গাজী তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। মনোয়ারা শুক্রবার দুপুরে মায়ের দেখা পান।

মনোয়ারা আরও জানান, স্বামী আর সন্তানদের মা-ভাইবোনদের খুঁজে পাওয়ার খবর দিছি। ওরা দু-একদিনের মধ্যে নাটোরে আসবে। এরপর মা আর ভাইবোনদের নিয়ে ঢাকায় যাব।

বাবার কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মনোয়ারা।

 

চন্দ্র বানু মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘এত দিন ভাবিছিনু   মাইয়াডা মরি গিছে। ওরে পায়া জানডা অনেক ঠাণ্ডা হয়ছে! এখন মরেও শান্তি পাব!’ তিনি বলেন, এই দিনে তার আব্বা বাঁচি থাকলে সব চাইতে বেশি খুশি হতেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তাকেই বেশি ভালোবাসতেন। বহুবার তিনি ঢাকায় খোঁজাখুঁজি করেছেন। প্রায় দেড় বছর আগে তিনি মারা গেছেন।

খলিল গাজী জানান, যার মাধ্যমে মনোয়ারা ঢাকায় গিয়েছিলেন, সেই মহিলাও আর বেঁচে নেই। তাই তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে তিনি আর ফিরে আসবেন না।

প্রতিবেশী চিকিত্সক খায়রুল ইসলাম জানান, মনোয়ারার আগমনে সারা গ্রামে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ওদের সংসারে আগের মতো আর অভাব-অনটন নেই। তাকে দেখার জন্য শত শত মানুষ আসছে প্রতিদিন। সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর