রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

নওগাঁর মাদুর যাচ্ছে সারা দেশে

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর মাদুর যাচ্ছে সারা দেশে

নওগাঁর রানীনগরের তৈরি মাদুর এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বেশ কদরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। গ্রামীণ জনপদের অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই মিলে রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করে জলপাতি ও বনপাতি থেকে মাদুর তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন। প্রতিটি পরিবার সপ্তাহে ৩০-৪০টি মাদুর তৈরি করে বিক্রি করছে। এতে শত শত পরিবার এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী। এখন এ পেশায় জড়িতদের সংসারে আর অভাব-অনটন জেঁকে বসতে পারে না। প্রতিদিন স্বল্প আয়ের মধ্য দিয়ে তারা সংসারের চাহিদা মিটিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে বিশেষ করে কাশিমপুর, মিরাট ও খট্টেশ্বর ইউনিয়নের কৃষকরা জলপাতি ও বনপাতির চাষ সবচেয়ে বেশি করেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে পাতি চাষ করে তারা বেশ লাভবান। বিগত দিনে মাদুরের চাহিদা বেশি থাকলেও পাতির অভাবে তারা বছরের অর্ধেক সময় বসে থাকতেন। কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ের কৃষককে যথাযথ পরামর্শ দেওয়ায় ও ধানসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে পাতি লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে রানীনগরে প্রায় দেড়শ হেক্টর জমিতে জলপাতি ও বনপাতি চাষ হচ্ছে। এর উত্পাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেলে শুধু এ উপজেলা থেকেই সপ্তাহে প্রায় দেড় লাখ পিস বিভিন্ন মাপের মাদুর তৈরি সম্ভব। বর্তমানে প্রতিদিন উপজেলার বাহাদুরপুর, চকমুনু, কুবিড়াতলি, কাশিমপুর, আতাইকুলা, হরিশপুর, মিরাট, হামিদপুর, কুজাইল ও পাশের নওগাঁ সদর উপজেলার চুণ্ডীপুর, চুনিয়াগাড়ী গাংজোয়ারসহ বিভিন্ন গ্রামের পেশাজীবী মানুষ স্থানীয় ত্রিমোহনী হাটে শনিবার ও মঙ্গলবার প্রায় ৭২ হাজার পিস মাদুর ১২০টি পাইকারি চাটির মাধ্যমে বিক্রি করেন বলে হাট ইজারাদার বেদারুল জানান। প্রতি আড়াই হাত/চার হাত লম্বা মাদুর ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মাদুর তৈরির সঙ্গে জড়িত মফিজ উদ্দিন, ময়েন উদ্দিন ও রাবেয়া আক্তার এ ব্যাপারে জানান, তারা প্রায় এক যুগ ধরে মাদুর তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে আসছেন। ত্রিমোহনী হাট থেকে এক আঁটি পাতি ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা দরে কিনে মাদুর তৈরি করে বাজারে বিক্রি করলে প্রায় ৭০০ টাকা লাভ হয় তাদের। তবে চাহিদার ওপর লাভের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। এ ব্যবসায় কোনো লোকসান হয় না বললেই চলে। পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে মাদুর তৈরি করায় সংসার চালাতে আর বেগ পেতে হয় না। উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ী ভুট্টু মিঞা জানান, প্রায় দেড় যুগ ধরে ত্রিমোহনী হাট থেকে চাটি পাইকারি দরে কিনে মাদুর তৈরি করে রাজধানী ঢাকা, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় চালান করে আসছেন। ব্যাপক চাহিদার কারণে লাভও ভালো হয়।

সর্বশেষ খবর